দেশে এখন আর কোন মঙ্গা নেই: অর্থমন্ত্রী
প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা : পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মঙ্গা নিরসন কর্মসূচির সমাপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে চিরবিদায় নিয়েছে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা। দেশে এখন আর কোন মঙ্গা নেই। তবে দ্রুত হারে দারিদ্র্য কমলেও এখনও কিছু মানুষ দরিদ্র বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
৩০ নভেম্বর (বুধবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ মিলনায়তনে মঙ্গা নিরসন সমন্বিত উদ্যোগ- ‘সংযোগ’ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পিকেএসএফের কর্মসূচি সমাপ্তির মাধ্যমে মঙ্গাও আজকের থেকে বিদায় নিল। এখন আমরা আনন্দের সঙ্গে বাংলা অভিধান থেকে মঙ্গা শব্দটি বিদায় করে দিলাম।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী আট বছরের মধ্যে দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। তার মানে এই নয় যে, ২০২৪ সালে একেবারে দরিদ্র থাকবে না। কিছু সংখ্যক বৃদ্ধ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী থেকেই যাবে। এদের সংখ্যা ৮-১৪ শতাংশের কম নয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে এসব মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের সব দেশেই একটি বড় সংখ্যক মানুষ রাষ্ট্রীয় এমন কর্মসূচির আওতায় রয়েছে।’
মুহিত বলেন, ‘আশির দশকে গ্রামীণ ব্যাংকের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করা হয়। বিশ্বব্যাংক বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে পরামর্শকও নিয়োগ দেয়। বিশ্বব্যাংক এ কার্যক্রম থেকে সরে যায়। এ কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পিকেএসএফ গড়ে তোলা হয়। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানও গড়ার চেষ্টা ছিল। কিন্তু গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ দিলেই কিছু শর্ত বেঁধে দেয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সাহায্য সংস্থা ডিএফআইডি পিকেএসএফের শক্তিশালীকরণে অর্থ দিলেও কোনো শর্ত দেয়নি। এ অর্থ পিকেএসেএফ-এর আজকের অবস্থানে উঠে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, ‘মানুষকে বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য অর্থ দিলেই হবে না। প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। এটি করতে না পারলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে না, দারিদ্র্য থেকে মানুষের মুক্তি ঘটবে না।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পিকেএসএফ বাস্তবায়িত মঙ্গা নিরসন কর্মসূচির আওতায় অতি দরিদ্রদের সংগঠিত করার মাধ্যমে তাদের মাঝে নমনীয় সঞ্চয়, সহনীয় ও নমনীয় ঋণ এবং আপদকালীন ঋণ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে (আইজিএ) অতি দরিদ্র সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্ব-নিয়োজিত ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অতি দরিদ্র পরিবারের নাজুকতা দূরীকরণে আর্থিক সেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও কারিগরি সেবাও দেয়া হয়। এছাড়া প্রয়োজনে মঙ্গাকালীন কাজের বিনিময়ে অর্থ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
পিকেএসএফ বলছে, মঙ্গা নিরসন কর্মসূচির আওতায় এ যাবত প্রায় ২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা নমনীয় ঋণ এবং ৭০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আপদকালীন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৫ জন সদস্যকে কৃষিজ ও অকৃষিজ বিষয়ক দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং ১ হাজার ৭৬৬ জন সদস্যকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাইম কর্মসূচির কারণে ২০০৭ সালে ছিল ৩৭ হাজার টাকা, তা এখন বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৮ টাকা দাঁড়িয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ২০০৭ সালে তিন বেলা খাওয়া মাত্র ৪ শতাংশ ছিল, যা এখন বেড়ে ৯৯ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। মঙ্গাকালীন সময়ে কর্মসংস্থান প্রায় শূন্যের কোঠা থেকে বর্তমানে মাসে ২১ দিন হয়েছে। ২০০৮ সালে পরিবারের গড় সম্পদ ছিল ৬২ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার টাকা।