চুরি হওয়া অর্থের বাকিটাও ফেরত দিতে হবে : আইন মন্ত্রী

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক দৃঢ়ভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের বাকি টাকাও ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) ফেরত দিতে হবে।

ম্যানিলা থেকে দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয়স্থ নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে আলোচনার জন্য আইন মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল গত শনিবার ফিলিপাইনে যায়। এ প্রতিনিধি দল ম্যানিলায় সেদেশের মন্ত্রিসভার দু’জন সদস্য এবং সিনেটের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার রাতে প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরেন।

প্রতিনিধি দলের নেতা আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তাদের ফিলিপিন্স সফরকে সফল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফিলিপিন্স ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অত্যন্ত গাঢ়, সে কারণে চুরির টাকা ফেরত দিতে যত প্রকার সহযোগিতা প্রয়োজন, বাংলাদেশ সরকারকে সে-সহযোগিতা করতে ফিলিপিন্স সরকার প্রস্তুত।

আনিসুল হক বলেন, কথায়, কাজে ও বডি ল্যাংগুয়েজে তারা আমাদের এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন। একথাও পরিষ্কারভাবে তারা বলেছেন, বাংলাদশের হয়ে এই অর্থ আদায়ের জন্য ফিলিপিন্স সরকার ও সিনেট লড়ে যাবে। মন্ত্রী বলেন, ফিলিপিন্সের ক্রেডিবিলিটি এবং তাদের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের ক্রেডিবিলিটি জড়িত-এ বিষয়টি চিন্তা করে সেদেশের সরকার চুরির অর্থ ফেরতে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে।

আজকের পৃথিবীতে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা প্রয়োগ করার ব্যাপারেও সকল রাষ্ট্র অত্যন্ত সচেতন। সেই কারণে এটার গুরুত্ব বুঝে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা।

আনিসুল হক বলেন, ম্যানিলা সফরের সময় আরসিবিসির দায় নিয়ে পুনরায় শুনানি শুরু করতে সিনেট সভাপতির নিকট প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে তার অফিসকে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

সিনেট সভাপতির উদ্বৃতি দিয়ে আইন মন্ত্রী বলেন; পরিষ্কারভাবে তিনি বলেছেন, অন্যায়ভাবে কেউ লাভবান হোক, তাদের সরকার তা হতে দিবে না। কারো অর্জিত আয়ের টাকা কেউ বেআইনিভাবে রেখে দিবে সেটাও ফিলিপিন্স সরকার হতে দেবে না।

ফিলিপিন্সের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, আমরা তার কাছেও আমাদের দাবি উত্থাপন করেছি। আমাদের দাবির সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো, ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঘটনায় অনেক নিয়ম ভাঙায় আরসিবিসিকে প্রশাসনিকভাবে দায়ি করে তাদের ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার জরিমানা করেছিল। তার বিরুদ্ধে আরসিবিসি কোন আপিল না করে জরিমানা মেনে নিয়ে ১০ মিলিয়ন ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছে। বাকী ১১ মিলিয়নও পরিশোধ করবে।

আইন মন্ত্রী বলেন, ফিলিপিন্সের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টিকে যুক্তি সঙ্গত হিসেবে দেখছেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে আরসিবিসিকে এই টাকা পরিশোধ করার জন্য যত রকম আইনী এবং প্রশাসনিক চাপ দেওয়া দরকার, টাকা আদায় করতে বাংলাদেশের হয়ে তাদের সরকার ও মন্ত্রণালয় সেটা করবে।

কি পরিমাণ টাকা ফেরত আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার কথা হচ্ছে ৬৬ মিলিয়নই আসবে। ফিলিপিন্সে আইনী লড়াই অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করছি, যদি টাকা আদায়ে তারা অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে সেখানেও আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’

আরসিবিসির সাম্প্রতিক বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, দায় স্বীকারের পর যদি বলে, আমরা দায় স্বীকার করছি না। তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা কেবল দায় স্বীকারই করেনি, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর নির্ধারিত সাজা হিসাবে ২১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলার ফেরতও দিয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ