পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি : অং সান সু চি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি দাবি করেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই তাঁর সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত হওয়ার পথে। তাঁর দাবি, রাখাইনে শুধু মুসলমানরাই উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তা নয়, সেখানকার রাখাইন জাতিগোষ্ঠীও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে। সিঙ্গাপুরে সরকারি সফরকালে চ্যানেল নিউজএশিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চি গত শুক্রবার এসব কথা বলেন।
সেনাবাহিনী যখন রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যেই সু চি এমন দাবি করলেন।
সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টাপ্রধান সু চি। সমস্যাটা নিয়ন্ত্রণের অনুপযোগী কি না জানতে চাইলে সু চি বলেন, ‘না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সারাক্ষণ নেতিবাচক কথা না বলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়তে সহযোগিতা করে, তাহলে সেটিকে তিনি অভিনন্দন জানাবেন। তিনি বলেন, রাখাইনে দুই সম্প্রদায়ের (রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ) মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের সমস্যাটি ঠিকমতো উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুব সংবেদনশীল ও সূক্ষ্ম বিষয়। শুধু যে মুসলিমরাই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত, তা নয়। রাখাইন সম্প্রদায়ও একই রকম চিন্তিত, রাজ্যের জনসংখ্যায় তাদের উপস্থিতি শতাংশের হিসাবে ক্রমশ কমে আসছে। আর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নেই—এই সত্য আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমরা এই সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে চাই। কিন্তু সবাই যদি পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকটির প্রতি মনোযোগ দিতে থাকে, সেটা কাজে দেবে না। পুলিশচৌকিতে গত ৯ অক্টোবর হামলা হয়েছিল—এটাও তো সত্যি।’
ওই হামলার জন্য ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করা হলেও সরকার আগে রোহিঙ্গা সংহতি সংগঠনের দিকে ইঙ্গিত করেছিল। আর তারপর থেকে সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় তৎপরতা বাড়াতে শুরু করে। ওই এলাকায় রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বসবাস বেশি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরার নামে নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে অভিযান শুরু করলে হাজারো মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বেসামরিক লোকজনের ওপর হত্যা ও গণধর্ষণ এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার পর সু চি বলেন, ‘আমি সেটা জানি। আমি বলছি না যে ওখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে জনগণ যদি সমস্যাগুলো বুঝতে পারে এবং সমাধানের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়, ভালো হবে। অতিরঞ্জিত করলে বরং সমস্যাটা বাস্তবতার চেয়ে আরও খারাপ দেখাবে।’
মিয়ানমারের সরকারে কার্যত সু চিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিজ প্রশাসনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রীরা দুর্নীতিগ্রস্ত নন বলে তিনি সন্তুষ্ট। তবে কেউ কেউ প্রত্যাশার তুলনায় কম পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। আশা করা যায়, এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
প্রায় অর্ধশতকের সামরিক শাসন পেরিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারে উত্তরণের যাত্রা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‘জনগণকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে আমি ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলাম। সামরিক জান্তার শাসনের সময় অনেক বাধার মধ্যেও আমরা নিজেদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। তাই অনেকের শক্তি বা আমাদের রাজনৈতিক দলের অনেক সাধারণ সদস্যের শক্তিকে আপনি খাটো করে দেখতে পারেন না। আমাদের দলের মানুষেরা সত্যিকারের জনগণ, আর আমরা জনগণের খুব কাছে রয়েছি।’
মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী সু চি, তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন। বললেন, ‘একজন নেতা হিসেবে আমি কতটা সফল, সেটা নির্ধারিত হবে আমি নিজেকে কতটা পরিহার্য করে তুলতে পারি—তার মাধ্যমে। আশা করি, আমি নিজেকে সম্পূর্ণ বদলযোগ্য করতে পারব। তখন আমার দেশ বা রাজনৈতিক দলই চাইবে না আমি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকি।’