ওপেন স্কাই সুবিধা চায় ভারত

স্টাফ রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ওপেন স্কাই সুবিধা চায় ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে এ বিষয়ে আলোচনা করতেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছেন।

তবে বাংলাদেশ এখনই ভারতের সঙ্গে ওপেন স্কাই নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। অন্যদিকে, এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরাও ওপেন স্কাই সুবিধা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দেওয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত ২১ নভেম্বর সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এভিয়েশনের সেক্টরে কোনো প্রকল্প, প্রস্তাবনা, এজেন্ডা তুলে ধরা হবে কিনা এ বিষয়েও খোঁজ নেন হাইকমিশনার। ভারতীয় হাই কমিশনার ওপেন স্কাই সুবিধা দিতে প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানেও ভারতের হাই কমিশনার ওপেন স্কাইয়ের বিষয়ে প্রস্তাব করেন। সে অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত নতুন পলিসিতে অন্যদেশগুলোর সঙ্গে ওপেন স্কাই সুবিধাকে বাড়াতে যাচ্ছে। এতে করে দু’দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে।’

হাই কমিশনারের বক্তব্যের জবাবে একই অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হাই কমিশনার ওপেন স্কাইয়ের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্র্যাকটিকাল ওপেন স্কাই হয়েই আছে। প্রধানমন্ত্রী ১৭-১৮ ডিসেম্বরের দিকে ভারত সফরে যাবেন। এবার যে আলোচনা হবে, তাতে যেন আমাদের এভিয়েশন সেক্টর যুক্ত থাকে সেজন্য আমরা কাজ করেছি।’

এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহনে অন্যদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে অনুমতি লাগে। তবে ওপেন স্কাই চুক্তি থাকলে এ ক্ষেত্রে আলাদা অনুমতির দরকার হয় না। ওপেন স্কাই চুক্তি দুটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা ততোধিক দেশের মধ্যেও হতে পারে। এ চুক্তির মাধ্যমে আকাশসীমা ব্যবহারের পাশাপাশি বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকে। এছাড়া, বিমানব্ন্দরে উড়োজাহাজের যাত্রীদের বোর্ডিং ছাড়া জ্বালানি সংগ্রহ, যাত্রীদের অন্য ফ্লাইটে কানেকটিং করার সুবিধা থাকবে।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন খাত বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওপেন স্কাই সুবিধা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ আমরা প্রস্তুত না। আমাদের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা এখনও সে পর্যায়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি পর্যাপ্ত নয়। এখনই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এ বিমান ফেল করে। আমাদের এভিয়েশন সিকিউরিটিতেও দুর্বলতা রয়েছে, যার কারণে আমাদের দেশ থেকে কোনও কোনও দেশে কার্গো সুবিধা বন্ধ রয়েছে।’

সব কিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুবাইতে ওপেন স্কাই সুবিধা রয়েছে, ভারতেও আছে। তবে ভারত মাঝে মাঝে পর্যটনবর্ষ উদযাপনের সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরের জন্য এ সুবিধা নির্ধারিত সময়ের জন্য দিয়ে থাকে।’

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারত বড় দেশ। আমরা তাদের ওপেন স্কাই সুবিধা দিলে ঠিক থাকতে পারবো না। আমাদের যে ফ্রিকোয়েন্সি আছে সেটাই আমরা পুরো ব্যবহার করতে পারছি না। ওপেন স্কাই সুবিধা দিল ভারতের আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ নেওয়া লাগবে না। আকাশকে উন্মুক্ত করে দিলে ব্যবসা ভারতের হাতে চলে যাবে।’

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত (বিমান ও সিএ) সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘ভারতীয় হাইকমিশন প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের হাইকমিশনার মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মৌখিক ভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমাদের সাথে কারও ওপেন স্কাই নেই। তবে আমরা মেন্টালি রেডি না।’

প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে জিয়াউল হক বলেন, ‘দেশের এভিয়েশন খাতের বিভিন্ন প্রজেক্টে ও খানজাহান আলী সহ কিছু বিমানবন্দরের লোনের বিষয় প্রস্তাব রয়েছে।’

এ বিষয়ে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘ওপেন স্কাই সুবিধা চালু হলে দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। বাংলাদেশ সহজে ভারতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সুযোগ পাবে। বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষায় পরিবর্তন আসবে। নতুন বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারত ও বাংলাদেশের যোগাযোগ সহজ করতে ওপেন স্কাই সুবিধা কার্যকর ভুমিকা রাখবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে যোগাযোগ করা হলে শুক্রবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা ওপেন স্কাইয়ের কথা ভাবছি না। ভারত আমাদের যে ফ্যাসিলিটি দেবে, আমরাও একই ফ্যাসিলিটি দেবো।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ