বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিরোধীরা গ্রামে বাস করেননি: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাস্তবসম্মত চিন্তা থেকেই বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা এই আইনের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা কোনো দিন গ্রামে বাস করেননি। আজ বুধবার সংসদের জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে কাউকে স্রোতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না।’
গত ২৪ নভেম্বর সরকার বিয়ের জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর বয়স হওয়ার শর্ত রেখে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ অনুমোদন দিয়েছে। তবে বিশেষ প্রেক্ষাপটে আদালতের নির্দেশ নিয়ে এবং মা-বাবার সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিয়ের সুযোগ রাখা আছে এ আইনে।
তবে বিভিন্ন মহল মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স না কমানোর দাবি করে আসছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমাদের আর্থসামাজিক বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। যাঁরা বিরোধিতা করছেন, সমাজের প্রতি তাঁদের দায়দায়িত্ব কম। কারণ, তাঁরা এনজিও করে পয়সা কামায়। কিন্তু দায়িত্বটা নেয় না। এঁরা কোনো দিন গ্রামে বাস করেননি। গ্রামের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। শুধু একবার গেলাম, দেখলাম, আর মুখের কথা শুনলাম, তাতেই সবকিছু জানা হয় না।’
প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতাকারীদের দেশের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা জানতে দিনের পর দিন গ্রামে বসবাসের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাস্তবতাকে বিবেচনা নিয়েই বাল্যবিবাহ আইনটি করছি। গ্রামের পারিবারিক মূল্যবোধ ও সমস্যা সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। যে কারণে তাঁদের অনেক বড় বড় কথা। এঁরা রাজধানীতে বসবাস করেন। রাজধানীর পরিবেশটাই তাঁরা দেখেন। বাস্তব অর্থে গ্রামীণ পরিবেশ সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না। আইনে কোনো সমস্যা থাকলে সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। না হলে সমাজে অনেক বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৮ পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু একটি মেয়ে যদি কোনো কারণে ১২/১৩ বা ১৪/১৫ বছর বয়সে গর্ভবতী হয়ে যায়, অথচ গর্ভপাত করানো গেল না। তাহলে যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার অবস্থান কী হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? শিশুটির ভবিষ্যৎ কী হবে? যদি অ্যাবরশনের বিষয়টি আইনে থাকে, তাহলে সমস্যা নেই। অ্যাবরশন করিয়ে নেবে। আর যদি না থাকে, তাহলে যে মেয়েটি সন্তান জন্ম দিল, তার ভবিষ্যৎ কী হবে? এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এই নতুন আইন। মা-বাবার মত নিয়ে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে দিলে শিশুটি সামাজিকভাবে বৈধতা পাবে।’
ইউরোপের অনেক দেশে বিয়ের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে অনেকেই ১২-১৩ বছর বয়সে মা হয়ে যায়। কারণ, বাবার পরিচয়বিহীন শিশুর স্বীকৃতি বা শিক্ষা গ্রহণে কোনো সামাজিক সমস্যা হয় না। ওই সব দেশে কেউ জানতে চায় না শিশুর বাবা বা মা কে? কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। বাবার নাম কী, মায়ের নাম কী—এসব তথ্য না দিলে এ শিশুকে কেউই গ্রহণ করবে না। বিয়েও দেওয়া যাবে না। তাকে কেউ চাকরিও দেবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যত দিন সরকারে আছি, তত দিন আমার দায়িত্ব ওই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আসা শিশুটিকে সমাজে স্থান করে দেওয়া। সে জন্যই নতুন বিধান করেছি। কারণ, এটা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত চিন্তা।’
মমতাজ বেগমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিত্তবানদের সন্তানদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সরকারকে ভাবাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ সম্পর্কিত ফখরুল ইমামের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে কাউকে স্রোতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না। কারণ, আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। প্রতিবেশী দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। নয়জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। আর্মির ট্রাকে হামলা করেছে। তারপরে এ ঘটনাটা ঘটেছে। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাল, তাদের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ কষ্ট পাচ্ছে। এসব অসহায় নারী-পুরুষের কোনো অপরাধ নেই। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারাই অপরাধী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ হত্যা ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশে আত্মগোপন করে থাকলে তাদের আটক করে সে দেশে ফেরত পাঠাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মিয়ানমার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হবে। আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে, আমাদের প্রতিবেশী দেশে কোনো অঘটন ঘটাক, এটা আমরা মেনে নেব না। আর ইতিমধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বলা হয়েছে, তারা এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে, যাতে ওখান থেকে রিফিউজি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। মানবতার দিকে আমাদের তাকাতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে যেন কোনো অঘটন না ঘটে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হচ্ছে।’
প্রশ্নোত্তরের আগে বিকেল চারটার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে অধিবেশন শুরু হয়।