সাকিবের আবেগ
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সাকিব আল হাসান এমনই। এখন তবু সতর্ক হয়েছেন। বয়স পরিণত করেছে। অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন। আগে মনের ভেতরে যা আসত, বলে দিতেন। এ নিয়ে নানা সময়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সে বিতর্ক কখনো কখনো ঝড়ও তুলেছে। কখনো তাতে সাকিবের দায় ছিল, কখনো কখনো ছিলও না। কখনো সাকিব ভুল বুঝেছেন, কখনো তাঁর কোনো মন্তব্য ভুলভাবে বোঝা বা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সাকিব আসলে আবেগে টইটম্বুর একটা মানুষ। কখনো সেই আবেগের বেগ পরিমিতিবোধের মাত্রা ছাড়িয়েছে— -এও সত্যি। কখনো সাকিবের আবেগে পুরো দেশ মিশে গিয়ে কেঁদেছে—২০১২ এশিয়া কাপের সেই ফাইনাল। কখনো সাকিবের সঙ্গে মিশে গিয়ে পুরো দেশ স্যালুটও ঠুকেছে, যাতে শামিল হয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মতো সম্মানিতরাও।
আবার স্যালুটের বদলে সেলামি? শুধু আচরণবিধি ভাঙার অপরাধে সাকিবের দেওয়া জরিমানার অঙ্কটাও কিন্তু কম নয়! গতকাল আবারও যেমন জরিমানা গুনলেন বিসিবির আচরণবিধি ভাঙায়। মাঠের আম্পায়ারের দিকে যেভাবে ভঙ্গি করলেন, সেটা ঠিক ক্রিকেটের সঙ্গে মানায় না। অবশ্য এবারের বিপিএলে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। ভুল সিদ্ধান্ত আম্পায়ারা দিচ্ছেন, কিন্তু তবুও সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের এমন আচরণ আসলেই বেমানান। ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। দুটি ডেমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতের শাস্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
এর আগে সাকিবের কিছু সোজাসাপ্টা মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। দেশের ক্রিকেটারদের ফিটনেসের ঘাটতি বোঝাতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাস, বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার পাল্টা জবাবে সাবেক ক্রিকেটারদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন করা, অধিনায়ক থাকার সময় মাশরাফির ফিটনেস প্রসঙ্গে খোলাখুলি মন্তব্য…কোনোটাই তাঁর জন্য সুখকর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকেনি।
২০১৪ এশিয়া কাপে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে তিন ম্যাচের জন্য বহিষ্কার ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বছর ভারত সিরিজেই আবারও তিনি শৃঙ্খলাভঙ্গ করেন ম্যাচ চলাকালে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে। ওই সময় স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে এক বখাটে দর্শকের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। অনুমতি ছাড়াই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) যাওয়া নিয়ে তো অনেক বিতর্ক হয়েছিল। ছয় মাস নিষিদ্ধও হয়েছিলেন সাকিব। কোচ হাথুরুর সঙ্গে তাঁর ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। সে সময় আবেগে অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
আশার কথা সাকিব ধীরে ধীরে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আইকন তিনি। এমন পরিচয় ব্যাটে-বলে খেলার পাশাপাশি আরও কিছু দায়িত্বও নিয়ে আসে। সাকিব তা সব সময় মনে রাখতে পারেন, এটা যেমন সত্যি; ক্রিকেট-পাগল এই দেশে কিছু কিছু সমর্থকও সীমা ছাড়িয়েছে; কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও মাত্রা মেনে হয়নি—তাও সত্যি।