দরকার অর্থনৈতিক শক্তি, শুধু রপ্তানি শক্তি নয়

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিশ্ব অর্থনীতি যেভাবে বদলাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শুধু রপ্তানি শক্তি নিয়ে সামনে এগোতে চায়। অথচ দরকার অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করা।
ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব: পরিবর্তনশীল প্রবণতা’ শীর্ষক সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের সঞ্চালনায় এতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং ইউনিভার্সিটি অব উলস্টারের অর্থনীতির শিক্ষক এ আর ওসমানি।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগে যে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তা মোকাবিলা করা হচ্ছে আধা খেচড়াভাবে। এ ছাড়া এখন নতুন নতুন আইন ও মানদণ্ড করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এগুলো থেকে অনেকটাই দূরে। অথচ নিজের প্রয়োজনেই বাংলাদেশকে বিশ্বের নতুন আইন-কানুনের সঙ্গে বিযুক্ত থাকলে চলবে না।
আনন্দ আশ্রম চলচ্চিত্রে কিশোর কুমারের গাওয়া ‘পৃথিবী বদলে গেছে, যা দেখি নতুন লাগে’ গানের উদ্ধৃতি দিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক পৃথিবী এখন এতটাই বদলে গেছে যে অর্থনীতি এখন বড় ধরনের তত্ত্বগত সংকটে রয়েছে।
জাহিদ হোসেন চীনের উদাহরণ দিয়েও বলেন, দেশটি এখন আন্তর্জাতিক মুখিনতা থেকে অভ্যন্তরীণ ভোগের দিকে নজর দিয়েছে। কেন নজর দিয়েছে—তা বুঝতে হবে।
জাহিদ হোসেনের গানের সূত্র ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উত্তমকুমার-মালা সিনহা অভিনীত পৃথিবী আমারে চায় চলচ্চিত্রে কমল দাশ গুপ্তের সুর করা মোহিনী চৌধুরীর লেখা ‘পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়’ গান দিয়ে জবাব দেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বদলে যাওয়া অর্থনৈতিক পৃথিবীর সঙ্গে আমরা বলিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারছি না। আবার নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দাঁড় করাতে পারছি না।’ সার্কের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোটগুলোর সঙ্গে একাত্ম হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, ৯০০ কোটি ডলার পাচার হয়ে গেছে। বিষয়টিকে সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। মধ্যম আয়ের দেশ (এমআইসি) ও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ধারণাকে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও অনেক সময় গুলিয়ে ফেলেন বলে তিনি সমালোচনা করেন।
এস আর ওসমানি বলেন, ‘আমরা কেবল রপ্তানি শক্তি হতে চাই। অথচ দরকার হচ্ছে অর্থনৈতিক শক্তি হওয়া। এ জন্য অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।’
গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জন্য বিশ্বে অনেক বাজার এখনো পড়ে আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আরও রপ্তানি হতে পারে। চোখের সামনে রয়েছে আফ্রিকার বাজার। এগুলো ধরতে হবে।
বাংলাদেশ যত বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার যোগ্য, তত পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন গওহর রিজভী। প্রবাসী আয় কমে গেছে বলে বলা হলেও বাস্তবে টাকা আসা কমেনি বলে দাবি করেন তিনি।
গওহর রিজভী আরও বলেন, সবকিছুর পরও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। গওহর রিজভী আশাবাদী যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য উজ্জ্বল আগামী অপেক্ষা করছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ