শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের নতুন সূচির খোঁজে ভারত
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ফেব্রুয়ারির কোন সময় টানা তিন দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি দিল্লিতে থাকবেন, আপাতত তারই খোঁজ চলছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই দিনগুলো নির্দিষ্ট হলেই তা বাংলাদেশকে জানানো হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিশ্চিত হয়।
এ মুহূর্তে দিন নিয়ে কিছু জটিলতায় সেই সফর আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন ফেব্রুয়ারি মাসের কথা ভাবা হচ্ছে।
অনেক বছরের প্রথা ভেঙে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হবে। সে জন্য জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সংসদের বাজেট অধিবেশন ডাকা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজর এখন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘একটা বিশেষ কারণেই হাসিনার সফরের দিন ঘোষণা করা হয়নি। কারণটি হলো, সফরের দিন চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। যেকোনো সফর তখনই চূড়ান্ত হয় যখন দুই দেশের কাছেই নির্দিষ্ট দিনগুলো গ্রহণীয় হয়। এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলেই সফরসূচি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। আমরা চাই তিনি যত দ্রুত সম্ভব সফরে আসুন। দুই দেশই সেই দিন স্থির করার বিষয়ে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করছে।’
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছে, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সফরটি ফেব্রুয়ারিতে পিছিয়ে দিতে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য নতুন সময়সূচি বের করার বিষয়ে ভারত কাজ করছে। সেই সময়টা খুঁজে পাওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, ডিসেম্বরের ১২-১৩ তারিখে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ভারত সফরে আসছেন। তারপরেই আসছেন তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এমোমালি রাহমন। ১৪ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত তাঁর সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসার তারিখও ছিল ওই ১৮ ডিসেম্বর।
সংশয়ের শুরু ওখান থেকেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের কথায়, এই সময় দিল্লিতে প্রায়ই কুয়াশা পড়ে। কুয়াশাজনিত কারণে ১৮ তারিখ হাসিনার বিমান দেরিতে অবতরণ করলে ওই দিন সব কটি অনুষ্ঠানের সময়সূচিতে বদল ঘটতে বাধ্য। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বিষয়টির ওপরই জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রেও এই কুয়াশার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এক সূত্র বলেছে, ১৭ তারিখ রাতে আসা সম্ভব নয়। আসতে হবে ১৮ তারিখেই। কুয়াশার জন্য দেরি হলে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনায় দেরি হবে। তারপর রাজঘাটে গান্ধীজির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেরি হয়ে যাবে। দেরি হবে হায়দরাবাদ হাউসের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায়। সূত্রটি বলেন, এই অনুষ্ঠানগুলো ঘড়ির কাঁটা ধরে চলে। এই সফরের অন্য একটা দিক হলো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনানীদের সম্মান জানানো। সেটা ১৯ তারিখে করার কথা। কিন্তু তা করা যাবে না। কারণ, ১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্য অনুষ্ঠান রয়েছে। হাসিনাও মোদিকে ছাড়া ওই অনুষ্ঠান করতে রাজি নন। কাজেই সফরসূচি স্থগিত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাইকমিশন দুই সূত্রের মতে, দিন ঠিক করতে না পারাটাই সফর পেছানোর একমাত্র কারণ। এর মধ্যে অন্য কারণ খোঁজা অর্থহীন। তবে এই সফর স্থগিত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনার শেষ নেই। কেউ কেউ তিস্তা নিয়ে সন্দিহান। মোদি-মমতা রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন যে রকম, তাতে তিস্তা নিয়ে কোনো আশা না করার প্রসঙ্গ তাঁরা তুলছেন। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক সূত্র এই সংশয় খারিজ করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, তিনি অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন অববাহিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী।