বিশ্ববিদ্যালয় হলে বহিরাগতদের তাণ্ডব
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। এ সময় হলের কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্রকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে তারা। লুট করে নিয়ে যায় বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ ও মোবাইল। আহত তিন ছাত্রকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এ তাণ্ডব চালায়। এ সময় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিগ্বিদিক ছুটে আত্মরক্ষা করেন অনেকে। হামলায় জড়িত ব্যক্তি ও ইন্ধনদাতাদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্ররা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্র জানান, বেলা আড়াইটার দিকে হঠাৎ করে শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আবদুস সালাম হলে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও জিনিসপত্র তছনছ করতে থাকে। হামলাকারীরা চারতলা ছাত্রাবাসের প্রতিটি কক্ষের দরজা, জানালার কাচ, চেয়ার-টেবিল এবং ছাত্রদের মোবাইল, ল্যাপটপসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে।
শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, হামলাকারীরা ছাত্রদের কাছে থাকা টাকা ও বেশ কয়েকটি মুঠোফোন ও ল্যাপটপ লুট করে নিয়ে গেছে। এসব লুট করার সময় বাধা দিতে গেলে তারা কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্রকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত তিনজনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সত্যজিৎ (২২), বিপ্লব (২২) ও পাভেল (২২)। আহত অন্যদের শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। ওই খাবার পাওয়া না–পাওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা আবদুল হামিদ ওরফে রানা ও সাজ্জাদের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। তা ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ছাত্রলীগের নেতা হামিদের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রলীগের অনুমোদিত কোনো কমিটি নেই।
অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল হামিদ দাবি করেন, ছাত্রলীগ নামধারী সাজ্জাদ ও রিয়েলের নেতৃত্বে ওই হামলা হয়েছে। সাজ্জাদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ ইউসুফ মিঞা বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হলে যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা নজিরবিহীন। প্রতিটি কক্ষের ভেতরে দরজা-জানালা এবং আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজয় দিবসের খাবার পাওয়া না–পাওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হলেও এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পরিকল্পিত হামলা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্তে উপাচার্য মৌখিকভাবে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।