আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন নির্বাচকেরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের বিজয়ী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আজ সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। মার্কিন নির্বাচনের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়ম অনুসারে ৫৩৮ জন ইলেকটর বা নির্বাচক ১৯ ডিসেম্বর দেশজুড়ে কংগ্রেস ভবনগুলোয় ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকেন।
দীর্ঘদিন ধরেই ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট নিছক একটা আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হলেও ৮ নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয় এ পদ্ধতিকে আবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ সেই আলোচনাকে করেছে জোরদার।
৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হিলারি ক্লিনটন বেশ এগিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ইলেকটোরাল ভোট জিতে নেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যান। আজ সেই নির্বাচকেরা ঠিকমতো নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিলে ট্রাম্প পাবেন ৩০৬ ভোট, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০-এর চেয়ে অনেক বেশি। তবে ট্রাম্পের জন্য শঙ্কার বিষয় হলো, তাঁর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্বাচক ‘বিদ্রোহ’ করে বসলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, তাঁদের বেশ কয়েকজন এ ধরনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। নির্বাচনে রুশ সরকার ট্রাম্পকে জেতাতে কলকাঠি নেড়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ৬৭ জন নির্বাচক এ বিষয়ে আরও তদন্ত দাবি করেছেন।
এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারিকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে অঙ্গরাজ্যগুলোতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ৫৩৮ জন ইলেকটর বা নির্বাচককে বেছে নিয়েছেন। যে প্রার্থী কোনো অঙ্গরাজ্যের সাধারণ জনগণের ভোট (পপুলার ভোট) বেশি পাবেন, তিনিই ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকদের ভোট পেয়ে যান।
হিলারির ঝুলিতে রয়েছে ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট। ট্রাম্পের ইলেকটরদের মধ্যে ৩৮ জন তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে হিলারিকে সমর্থন দিলে জানুয়ারিতে তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এরই মধ্যে ক্রিস্টোফার সাপরান নামে রিপাবলিকান দলের একজন নির্বাচক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি তাঁর দলের প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন না। আরও কয়েকজন রিপাবলিকান নির্বাচক ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ‘হ্যামিলটন ইলেকটর’ হিসেবে পরিচিত কিছুসংখ্যক রিপাবলিকান নির্বাচকের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন ডেমোক্র্যাট নির্বাচকেরা। ‘হ্যামিলটন ইলেকটররা’ ট্রাম্পের পরিবর্তে অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজকের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে তিন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, ট্রাম্প তাঁর কাঙ্ক্ষিত ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেন। দ্বিতীয়ত, রিপাবলিকান নির্বাচকদের বেশ কয়েকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন, যার ফলে হিলারি জিতে যেতে পারেন। তৃতীয়ত, কোনো প্রার্থীই যদি ন্যূনতম ২৭০টি ভোট নিশ্চিত না করতে পারেন, তাহলে ন্যূনতম ২৬টি অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী প্রার্থী হবেন প্রেসিডেন্ট। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে গেলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর কংগ্রেসে ভোট হবে। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় ভোট হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা না গেলে নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন।
তবে ট্রাম্পের জন্য সুসংবাদ হলো, ইলেকটোরাল ভোট পদ্ধতির সংস্কার চাওয়া সংগঠন ফেয়ারভোটের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র ১৫৭ জন নির্বাচক বিদ্রোহ করেছেন। তাঁদের আবার অর্ধেকই নিজ দলের প্রার্থীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্য একজনকে ভোট দিয়েছিলেন। ১৮৭২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হোরাস গ্রিলি বিজয়ী হওয়ার পর ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের আগেই মারা যান। সে সময় এই দলের নির্বাচকেরা নিজ দলের অপর একজন প্রার্থীকে ভোট দেন।
৬৭ জন নির্বাচকের দাবি: নির্বাচনে রুশ সরকার ট্রাম্পকে জেতাতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কলকাঠি নেড়েছে বলে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ৬৭ জন নির্বাচক আরও তদন্ত দাবি করেছেন। সিআইএর তদন্তের তথ্যমতে, রুশ সরকারের সমর্থনে হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারির কয়েকজন নির্বাচনী কর্মকর্তার কম্পিউটার হ্যাক করে তথ্য চুরি করেছিল। তবে এই ৬৭ জন নির্বাচকের একজন বাদে বাকি সবাই ডেমোক্রেটিক দলের।
মাইকেল মুরের আহ্বান: বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা মাইকেল মুর ট্রাম্পকে ঠেকাতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিরোধ, বিপর্যয় সৃষ্টি এবং গণ-অবরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন স্যাটেলাইট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এমএসএনবিসির গত শুক্রবারের ‘অল ইন’ অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় মুর বলেন, হোয়াইট হাউসে প্রবেশের কোনো অধিকার ট্রাম্পের নেই।