ইসি মেরুদণ্ডহীন : খালেদা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কোনো যোগ্যতা তাদের নেই। তারা (ইসি) শক্ত থাকলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হত।”
সোমবার ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলে ধরার সঙ্গে ইসির সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপির জয়ের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আগামীতে জনগণ ক্ষমতাসীনদের উপযুক্ত জবাব দেবে।”
নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে খালেদা বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন।
“আমরা শান্তি ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। অস্ত্র ও সন্ত্রাসের রাজনীতি করি না।”
নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোকে নজির হিসেবে তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় নেতা।
রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর- এই পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলরের পদে বিএনপি সমর্থিতরা জয়ী হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, “পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও সরকার নানা অনিয়মের অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণ ও ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকায় তারা সেভাবে কারচুপি করতে পারেনি।
“তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ উপনির্বাচনেও ভোট কারচুপি কিভাবে হয়েছে, দেশের মানুষ তা দেখেছে।”
সংসদের এই দুটি আসনে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরা ঈদের পর এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করব।”
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “দেশ এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শেষ করে দিয়েছে। তারা সর্বত্র দুর্নীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। দেশে আজ কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই।”
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় তার প্রভাব আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও পড়েছে, বলেন তিনি।
ইসলামের নামে সরকারের ‘মিথ্যাচারের’ সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংসদে মিথ্যাচার করছেন। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেন, সে দেশে আল্লাহর রহমত আসে না।”
তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে সংসদে গেলে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার পাশাপাশি সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির সমালোচনা করে বিরোধী নেতা বলেন, “যোগ্যতা অনুযায়ী সবাই চাকরি পাবে। এই সরকার অন্যায়ভাবে আন্দোলনের কথা বলে কাউকে চাকরি না দিলে আমরা ক্ষমতায় গিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করব।”
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ভাংচুরের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, যারা ভাংচুর করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্বাণী হোটেলে এই ইফতার অনুষ্ঠানের শুরুতে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর জীবন ও কর্মের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়।
জোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্বে এতে আলোচনা করেন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, খেলাফতে ইসলামীর আমির আবুল হাসনাত আমিনী, ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি আবদুর রকিব, মুফতি মো. তৈয়ব প্রমুখ।
ইফতারে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, জয়নাল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুস সালাম, শিরিন সুলতানা।
১৮ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, পিপলস লীগের গরীব নেওয়াজ, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের আতিকুল ইসলাম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি।
দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হায়দার আহমেদ খান মন্টু, খেলাফত মজলিশের আবদুর রব ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রচার সম্পাদক আহলুল্লাহ ওয়াসেল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আলতাফ হোসেনও অনুষ্ঠানে ছিলেন।