জয় সরকারে ও রেহানা দলে ভালো করবেন

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, ‘সবচেয়ে সুন্দর হবে জয় যদি সরকারে থাকে, রেহানা যদি পার্টিতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে রেহানা রাজনীতি মোটামুটি ভালো বোঝে। যদিও রেহানাকে দেখছি অরাজনৈতিক, তবে রাজনীতি ভালো বোঝে। সে রাজনীতিতে আসতে চায় না। কিন্তু সময় হলে আসতে বাধ্য হবে।’
গত রোববার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনে সংবাদ পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠানে শফিক আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী। যদিও ড. শফিক ওই অনুষ্ঠানে বলেন, এসব তাঁর ব্যক্তিগত মত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপক বলেন, ‘জয় মডার্ন ছেলে। ডিজিটাল যুগের ছেলে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু জয় রাজনীতিতে আসবে কি না, এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় জয় খুব খারাপ করবে না, বিশেষ করে সরকার চালানোর ব্যাপারে।’
দল চালানোর ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ড. শফিক বলেন, ‘জয় ডিজিটাল সময়ের লোক। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখনো অ্যানালগ যুগের। আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিল অধিবেশনে সভানেত্রীর হাতে সব ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপিও খালেদা জিয়ার হাতে সব ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘জয় ও রেহানার কম্বিনেশন খুব ভালো হবে বলে মনে হয়। আমি সব সময় মনে করি পার্টি সরকার থেকে আলাদা হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধুর সময়ে সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান মন্ত্রী ছিলেন না। ’৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না, এটা তখন লোভনীয় ব্যাপার ছিল। তিনি ফুলটাইম পার্টির জন্য কাজ করেছেন।’ তাঁর প্রশ্ন, এখন কি বাংলাদেশে এমন লোক পাবেন? আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে যাঁরা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, বলেন তো ফ্লাগ ছেড়ে পার্টির সাধারণ সম্পাদক হতে। কাউকে পাবেন বলে মনে হয় না।
ড. শফিক সিদ্দিক নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপকে ইতিবাচক মনে করেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যও আশাব্যঞ্জক। আর প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে ব্যবস্থা নেবেন, তা আওয়ামী লীগ মেনে নেবে। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, ৪৫ বছর হলো দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারিনি। এটা বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। জনগণ দুই দলকেই দায়ী করবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ সংলাপের সফলতা নিয়ে তাঁর সংশয় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, অতিকথন দরকার নেই। রাজনীতিতে অনেক কথা হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পজিটিভ। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।
ড. শফিক বলেন, ‘পাবলিক চায়, আমরা চাই, জনগণ চায় ভোট দিতে। আমার ভোটটা আমি দেব। একই সময় সামগ্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াটা যেন ভালো হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে এগিয়ে গেছে। এই ছোট ব্যাপারটা আমরা কেন সমাধান করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, ভারতে বা পাকিস্তানে নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। নেপালে পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারে। ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে বিরোধীরা বলে না যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদকে জোর করে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. শফিক বলেন, এরশাদ সাহেব সকালবেলা এক কথা বলেন, সন্ধ্যার সময় আরেক কথা। এরশাদ নির্বাচনে না যেতে চাইলেও তিনি কীভাবে জয়ী হয়ে গেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি না-ই চাইত ফ্ল্যাগ নিয়ে অ্যাডভাইজার হলো কেমনে? ওনারে তো বোঝা মুশকিল। কোনো মাপেই এরশাদকে মাপা যায় না।’
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টোটালি ফেইল করেছে।
ড. শফিকের বক্তব্যের বিষয়ে মতামত জানতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, শেখ রেহানার স্বামী রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ হলেও তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি। ফলে তাঁর কথার মধ্যে রাজনৈতিক যে কৌশল থাকা দরকার তা নেই। এ জন্য উনি হয়তো ব্যক্তিগত আলাপে যা বলেন, জনসমক্ষে সেটাই বলেছেন।
জানতে চাইলে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা চলছে। দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের রাজনীতি কী—তা মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। এই মুহূর্তে ড. শফিক যা বলেছেন, তা অর্থহীন নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে দল ও সরকার আলাদা থাকাটাই রীতি। তবে দল এবং সরকার কে ভালো চালাতে পারবে, তা অগ্রিম বলা সম্ভব নয়। ড. শফিকের কথা শুনেছি, তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা দরকার।’
এদিকে বিবিসি বাংলার অনলাইনে এ বিষয়ে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পর শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের হাল ধরতে পারেন, এমন আলোচনা কখনো কখনো রাজনৈতিক মহলে শোনা যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা কখনোই হয়নি, কিন্তু অনেকেই মনে করেন শেখ হাসিনার বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন, তিনি ভবিষ্যতে দলের হাল ধরতে পারেন। আবার বরাবরই রাজনীতির বাইরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার কথাও কারও কারও আলোচনায় আসে। কিন্তু এ নিয়ে ওই পরিবারের কোনো সদস্যের মনোভাব কখনো জানা যায়নি। কিন্তু এবার শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট জামাতা ও শেখ রেহানার স্বামী ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, তিনি বললেন, শেখ রেহানা যদিও রাজনীতিতে আসতে অনিচ্ছুক, কিন্তু প্রয়োজন ও সময় হলে তিনি রাজনীতিতে আসতে পারেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ