নারায়ণগঞ্জে ভোটের লড়াই শুরু
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে।
প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ ভোটার আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁদের ‘নগর অভিভাবক’ বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন।
আজ রাতেই বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করার কথা রিটার্নিং কর্মকর্তার।
গত তিন বছরে সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জয়ের যে ধারা তৈরি হয়েছে, এই নির্বাচন তার ব্যতিক্রম। নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দল বেঁধে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান বলে মনে করছেন ভোটাররা। তাই আজ সবার দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জের দিকে।
প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করতে ভোটারদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
দলীয়ভাবে ও দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেই প্রথম ভোট হচ্ছে। এর আগে সব সিটি করপোরেশনে দলনিরপেক্ষ ভোট হয়েছে।
দলীয় প্রতীকে হওয়া নির্বাচনগুলো নিয়ে একের পর এক অভিযোগ ওঠার মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। প্রার্থীদের মধ্যে একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনাও ছিল কম। কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে শঙ্কা থাকলেও তাঁদের মধ্যেও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সরকারি দলের নেতা, এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও স্বীকার করেছেন, এই নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন বারবার আশ্বস্ত করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আলাপকালে নির্বাচনে থাকা পাঁচ মেয়র প্রার্থী ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভোটারদের অভয় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
নির্বাচন কমিশন সচিব আবদুল্লাহ বলেছেন, শঙ্কা দূর করে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু হবে বলে তাঁর আশা।
দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। যদিও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। অন্য তিন প্রার্থী হলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল হক (মিনার)। ২৭ ওয়ার্ডে ২৭টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৫৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ৯টি পদে ৩৮ জন প্রার্থী রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রথম ভোট হয় ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ও বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ভোট। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ভোটের সাত ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। পুরুষ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন। তিনটি থানা নিয়ে এই সিটির অবস্থান। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার ১০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৭। সদর থানার ৮ ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১২ এবং বন্দর থানার ৯ ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২২ জন।
নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৪টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০৪। সবগুলো ভোটকেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ৩২২। এর মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যবেক্ষক রয়েছেন বলে কমিশন থেকে জানা গেছে। দেশি ১৬টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটার ৭১ হাজার। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে নয় হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির ২২ প্লাটুন সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সদস্যদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে এবং চার হাজার ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রথম স্তরে আনসার, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ ও তৃতীয় স্তরে স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে।