জয়ী হয়েছে ভোট
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নির্বাচনের কারণে গতকাল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। নির্বাচন কমিশনের স্টিকার না থাকায় গাড়ি নিয়ে আসতেও সমস্যা ছিল। অগত্যা ঢাকা থেকে অটোরিকশায় নারায়ণঞ্জ আসি। মাঝখানে সাইনবোর্ড এলাকায় নেমে সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্রে ঢুঁ মারি। সারা দেশের মানুষের নজর যেমন নারায়ণগঞ্জের প্রতি, তেমনি বোধগম্য কারণে নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাড়তি দৃষ্টি ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের দিকে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখলাম, কোনো উত্তাপ নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবাই ভোট দিচ্ছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে যে অটোরিকশায় চাষাঢ়া মোড়ে আসি, সেই অটোর চালককে জিজ্ঞেস করি, ভোট কেমন হচ্ছে। বললেন খুব ভালো ভোট হচ্ছে। পরের প্রশ্ন ছিল, কোন মার্কা জিতবে? ধানের শীষ না নৌকা? অটোচালক সাকিব বললেন, ‘মার্কা-টার্কা বুঝি না, আইভী আপাই জিতবেন।’ পাশে বসা মধ্যবয়সী সহযাত্রী যোগ করলেন, আইভী কোনো দলের নয়, মাটির ভেতর থেকে আসা নেত্রী। তখনই মনে পড়ল কয়েক দিন আগে শীতলক্ষ্যা ঘাটের ওপারে আনোয়ার নামে এক মাঝির কথা। তিনি বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক মন্ত্রী-সাংসদ হয়েছেন। গত ৪৫ বছরে বন্দরে কেউ কিছু করেননি, যা উন্নয়ন আইভী আপাই করেছেন। ২৩ তারিখ আসবেন, মিষ্টি খাইয়ে যাবেন।
চাষাঢ়া মোড় থেকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দিকে যেতে সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা। মনে হলো ঢাকার অর্ধেক সাংবাদিক নারায়ণগঞ্জে এসেছেন শুধু খবর সংগ্রহ নয়, একটি সুন্দর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিতে।
পথে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা। বললেন, ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে তাঁরা ৫৮টি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। কোথাও গোলযোগ ছিল না। ভোট পর্ব শেষে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে স্থাপিত নির্বাচনী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছিল। দোতলায় উঠতেই বিএনপির এক নেতার সঙ্গে দেখা। তিনি বললেন, ভালো ভোট হয়েছে। ধানের শীষ প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ৩০-৪০ হাজার ভোটে জিতবেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করি, এতটা নিশ্চিত হলেন কীভাবে? তাঁর রহস্যপূর্ণ জবাব, সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির যে নেতাকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তা ছাড়া ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আইভীর পক্ষে নামেননি। এর কিছুক্ষণ পর যখন ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল, তখন দেখা গেল প্রথম ১৮টি কেন্দ্রের ১৭টিতেই নৌকা এগিয়ে। তখন বিএনপির ওই নেতা হতাশার সুরে বললেন, সিদ্ধিরগঞ্জে ধানের শীষ ভালো না করলে তাঁদের জয়ের সম্ভাবনা নেই।
ভেতরে যখন ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল, বাইরে রাস্তাজুড়ে মানুষের ঢল। নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় শহরে অনেকটা ‘হরতাল অবস্থা’। কিন্তু কোনো উত্তেজনা নেই। এমনকি ফলাফল ঘোষণায় বিজয়ী দলের কর্মী-সমর্থকদের উল্লাসও ছিল নিয়ন্ত্রিত। ভোট গ্রহণের সময় যে শান্তি বিরাজ করছিল, ভোট গ্রহণের পরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কারও বিরুদ্ধে কোনো স্লোগান ওঠেনি। ওদিকে নৌকা যখন জয়ের পথে, তখন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাসভবনের সামনে লোকজনের ভিড় বাড়ছিল। থেমে থেমে নৌকার পক্ষে স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছিল।
যেকোনো নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও দুই প্রধান প্রার্থীর মধ্যে একজন জয়ী হয়েছেন, আরেকজন পরাজিত হয়েছেন।