ভেট্টোরি নামের সেই আতঙ্ক আর নেই !

স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: লড়াইয়ের সেই ময়দান আগের মতোই আছে। কোথাও তীব্র বাতাস, কোথাও আবার সুচ ফোটানো ঠান্ডা। কঠিন কন্ডিশন নিয়ে অপেক্ষা করছে ক্রাইস্টচার্চ, নেলসন, নেপিয়ার। এই প্রতিকূল কন্ডিশন জয় করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এসবের বাইরে সাকিব-তামিমদের মনে হয়তো স্বস্তির একটা ফুরফুরে বাতাসও বইছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আতঙ্কই যে নেই বর্তমান নিউজিল্যান্ড দলে !
কে সেই আতঙ্ক? ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। হাবিবুল বাশার, জাভেদ ওমর থেকে তামিম ইকবাল-সাকিবদের প্রজন্ম—এক যুগেরও বেশি সময় ভেট্টোরি তাঁর স্পিন-মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
ভেট্টোরির টেস্ট অভিষেক ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশের ভেট্টোরি-ভোগান্তির শুরু ২০০১ সালের ডিসেম্বর থেকে। ক্রিস কেয়ার্নস-শেন বন্ডদের আধিপত্যের সেই হ্যামিল্টন টেস্টে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ পাননি ভেট্টোরি। দুই ইনিংস মিলে বল করেছিলেন ২৪ ওভার। ৮টি মেডেনসহ ৪২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ওয়েলিংটনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভেট্টোরির উইকেটপ্রাপ্তির এই ধারা পরেও বহমান থেকেছে।
পরিসংখ্যানে তাকালে বাংলাদেশের ভেট্টোরি-ভোগান্তির আখ্যানটা আরও স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভেট্টোরি খেলেন ৯টি টেস্ট। ১৬.০৫ গড়ে নেন ৫১ উইকেট। ক্যারিয়ারে ১১৩ টেস্টে ৩৪.৩৬ গড়ে নিয়েছেন ৩৬২ উইকেট। ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে দুর্বোধ্য ছিলেন ভেট্টোরি। ২৯৫ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৩০৫ উইকেট। গড় ৩১.৭১। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১ উইকেট নিয়েছেন ১৯.৪৫ গড়ে। ওয়ানডেতে তাঁর সেরা বোলিংটাও বাংলাদেশেরই বিপক্ষে—৭ রানে ৫ উইকেট!

বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটটাও ছিল বেশ চওড়া। টেস্ট ও ওয়ানডে—বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে অনেক ভালো। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন টেস্টে বল হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। দুই ইনিংস মিলে নিয়েছিলেন একটি মাত্র উইকেট। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেন ৯৪ রান। ম্যাচটি ইনিংস ও ১৩৭ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টের কথাই ধরুন। ম্যাচে ৯টি উইকেট তুলে নেন। ৩১৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাঁর ব্যাটেরও হেসে ওঠার দরকার ছিল। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন অপরাজিত ৫৫। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৭৬ রান। ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নিউজিল্যান্ড।
শুধু পরিসংখ্যান থেকে কি আর পুরো গল্প খুঁজে পাওয়া যায়! ভেট্টোরির আতঙ্কের দিনগুলো খুব ভালোভাবেই মনে আছে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের, ‘নিউজিল্যান্ডের মাঠের ম্যাচগুলোতে আমাদের বেশি ভাবতে হতো ওদের পেসারদের নিয়ে। ওখানকার উইকেট আসলে পেসবান্ধব। সেই সময়ে ওদের ভালো ভালো পেসার ছিল। কিন্তু এর মধ্যেও আবার ভেট্টোরিকে নিয়ে বিশেষ করে ভাবতে হতো। কারণ, যেকোনো পিচেই উইকেট নিতে পারত ও।’
ভেট্টোরিকে সামলানো নিয়ে বাংলাদেশ শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় পড়ত দেশের মাটিতেও। উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকে দেশের মাটিতে স্পিনে ঘায়েল করতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ নিয়ে দুর্বিপাকে পড়ত টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে গিয়ে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে নিজেরাই না শেষে ভেট্টোরি-জালে ফেঁসে যায়!
শ্যাম রাখি না কুল রাখি করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ভেট্টোরির হাঁড়িকাঠেই বারবার মাথা পেতে দিয়েছে বাংলাদেশ! ২০০৪ ও ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরে এমনটাই ঘটেছে। ২০০৪ সালে দুই টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০ উইকেট নেন ভেট্টোরি। দুটি ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে দুই টেস্টের তিন ইনিংসে ভেট্টোরির স্পিন–ফাঁদে ধরা দেয় বাংলাদেশের ১৪ জন ব্যাটসম্যান।
২০১০ সালে ভেট্টোরির নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের গল্প আবার ভিন্ন। পাঁচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। বাকি চারটি ম্যাচই জেতে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ। চার ম্যাচে ভেট্টোরির উইকেট মাত্র ৭টি।
ভেট্টোরির ক্যারিয়ার তখন দাঁড়িয়ে ছিল শেষের শুরুতে। আর এখন তিনি সাবেকদের দলে। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরটা বাংলাদেশের জন্য তাই ভিন্ন রকমই। ভেট্টোরি-ফ্যাক্টর যে নেই এই সিরিজে !

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ