মান্নার খোঁজ নিচ্ছেন রাজনীতিবিদরা

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কারামুক্ত নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানও হাসপাতালে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নাকে দেখে এসেছেন। সেনা বিদ্রোহে উসকানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মান্নাকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের ২১ মাস পর গত ১৮ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন মান্না। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শুক্রবার ফুল হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যান মান্নাকে দেখতে। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করেন সাবেক দুই ছাত্রনেতা। মান্নার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেওয়ার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য কামরুল হাসানকে ফোন করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। রাজনীতির বাইরেও একটা সম্পর্ক থাকে। গতকালই আসতে চেয়েছি, নির্বাচনের (নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোট) কারণে পারিনি। আজ প্রোগ্রাম ছিল, শেষ করে চলে এসেছি।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে তখনকার জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মান্নার কাছে পর পর দুইবার পরাজিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা কাদের। মান্না নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০২ সালে পান সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব। সে সময় ওবায়দুল কাদের ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। শনিবার মান্নাকে দেখে আসার পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “আমি রাজনীতি করি, মান্নাকে দেখতে যাওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করি না, আমি কাজ করি মন থেকে।” মান্না যে তার হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেন রব। একই দিনে মান্নাকে দেখতে হাসপাতালে যান বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, “জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে, অসুস্থ; তাই দেখতে গেলাম। এটা একেবারেই সৌজন্য।” এর আগে শনিবার সকালে মান্নাকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা.জাফরউল্লাহ চৌধুরীও গিয়েছিলেন হাসপাতালে। মির্জা ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ ২২ মাস মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন মান্না। তিনি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা। কারাগার থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুনে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।” বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আশা করি তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন, দেশের মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করবেন।” ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান মান্না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পদ হারালে তিনি নাগরিক ঐক্য নামে নতুন দল গড়েন। ২০১৫ সালে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার টেলিফোন আলাপের দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়, যেখানে তার কণ্ঠে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহের সুর শোনা যায়। ওই কথোপকথনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাশ ফেলার’ কথাও বলতে শোনা যায় তাকে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ