ভূতের বাড়িতে বাংলাদেশ দল !
স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ব্যাপারটা কী রকম হয়ে গেল! কাল সিরিজ শুরু হচ্ছে, অথচ আজ পর্যন্ত দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎই হলো না!
সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে?’ ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘সে রকম তো কাউকে দেখলাম না…মাঠে এক-দুজনকে দেখেছি বোধ হয়।’ মাহমুদউল্লাহ দেখেছেন শুধু কেন উইলিয়ামসনকে। তাও হ্যাগলি ওভালে আজ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বলে। মুমিনুল হক জানালেন, বাংলাদেশ দল রেইজেস লাটিমার হোটেলে থাকলেও নিউজিল্যান্ড নাকি হ্যাগলি ওভালের কাছে ‘অনেক ভালো’ একটা হোটেলে আছে। সে জন্যই দুই দলের খেলোয়াড়দের দেখা-সাক্ষাৎ নেই।
মুমিনুলের কথায় কি নিজেদের হোটেল নিয়ে চাপা কোনো ক্ষোভ ফুটে উঠল! না, সে রকম কিছু নয়। তবে একটু পর রেইজেস লাটিমারের সামনে দাঁড়িয়েই মাশরাফি বিন মুর্তজা এ হোটেল সম্পর্কে যে তথ্যটা জানালেন, সেটা শুনে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গেল। অধিনায়কের সতর্কবার্তা, ‘ভাই, সাবধানে থাইকেন। এখানে কিন্তু ভূত আছে!’
মাশরাফির গল্পে ‘ভূত’ নতুন কিছু নয়। ইংল্যান্ডে তো একবার তিনি নিজেই ভূত সেজে সতীর্থদের ভয় দেখিয়েছিলেন। ভাবলাম, পুরোনো ভূত নতুন করে চেপেছে মাশরাফির ওপর। এবারও হয়তো সে রকমই কিছু করতে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাবনাটা হালে পানি পেল না মাশরাফির পরের কথা শুনে, ‘এই হোটেলে আমরা কেউ একা ঘুমাই না। আমি, তামিম আর তাসকিন এক সঙ্গে ঘুমাই। হোটেলের দিকে যে রাস্তাটা এসেছে, সেটা দেখছেন? কী রকম ভাঙা ভাঙা পথ, পাথরের টুকরো পড়ে আছে…।’ পাশে দাঁড়ানো নুরুল হাসানের চেহারায় আতঙ্ক, ‘আমরাও কেউ একা ঘুমাই না। দল বেঁধে ঘুমাই।’
আশপাশে তখন বাংলাদেশ দলের প্রায় সব খেলোয়াড় এবং দেখে মনে হলো না তাঁদের কারও মধ্যেই এই গল্পে অবিশ্বাস আছে। ভূত বিষয়ে মাশরাফি-তামিমের আগ্রহ নিয়ে রসিকতা করে মুশফিকই যা একটু বিষয়টা থেকে বের হয়ে আসতে চাইলেন। কিন্তু মাশরাফি বের হতে দিলে তো! রেইজেস লাটিমারে ভূতের অস্তিত্বের ইতিহাস টেনে আনলেন অধিনায়ক, ‘বিশ্বকাপের সময় এখানেই ভূতের লাথি খেয়ে পাকিস্তানের খেলোয়াড় হারিস সোহেলের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে গিয়েছিল। ঘুমের মধ্যে লাথি খেয়ে খাট থেকে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সেই রকম জ্বর। ওর তো পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।’
২০১৫-এর বিশ্বকাপের ওই ঘটনার খবর ছাপা হয়েছিল নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকায়ও। ভূতে বিশ্বাস না থাকলেও মাশরাফির কথাকে তাই উড়িয়ে দেওয়া গেল না। তা ছাড়া ভূত-প্রেতের গল্প সব সময় যে রকম বাস্তবতার ছায়া অবলম্বনে হয়, এখানেও সে ব্যাপারটা আছে।
ইতিহাসের বেশির ভাগ ভূতের সৃষ্টি মৃত মানুষের আত্মা থেকে। হয়তো আপনি কাউকে মেরে ফেলেছেন, সে-ই পরে ভূত হয়ে আপনার ঘাড় মটকাতে আসে। রেইজেস লাটিমারেও ‘ভূতের আগমন’ অনেকটা সেভাবে।
বিশ্বে ক্রাইস্টচার্চের পরিচিতি ভূমিকম্পের শহর হিসেবে। সর্বশেষ এ বছরও হয়েছে একটা বড় ভূমিকম্প, যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে ক্রাইস্টচার্চ। তবে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হওয়া ভূমিকম্প ছিল অনেক বেশি ভয়াবহ। শহরটাকে মোটামুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া সেই ভূমিকম্পে মারা যায় ১৮৫ জন মানুষ। এর মধ্যে ১১৫ জন মারা যান রেইজেস লাটিমারের ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা একটি ভবনের নিচে চাপা পড়ে।
মাশরাফির গল্প শুনে মনে হচ্ছিল, টিম হোটেলের ‘ভূতে’র সঙ্গে সেই মৃতদের কোনো একটা যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে।