আড়াই বছর পর ধবলধোলাইয়ের লজ্জা !

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ২৬ আগস্ট ২০১৪ থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬—বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ‘ধবল ধোলাইমুক্ত’ ছিল এ সময়টা। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর ধারাবাহিক সাফল্যে ‘ধবলধোলাই’কে অতীতের ব্যাপারই মনে করা শুরু করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু পুরোনো লজ্জাটা নতুন করে ফিরে এল প্রায় আড়াই বছর পর।
গত আড়াই বছরে বাংলাদেশ সব কটি সিরিজই খেলেছে নিজেদের মাঠে। সাফল্যের সে সব গল্প হয়তো এখন অপ্রাসঙ্গিকই মনে হবে। মানুষ থাকতে চায় বর্তমানে। কিন্তু সেই বর্তমানটাই যে বিবর্ণ হয়ে উঠল নিউজিল্যান্ডে।
নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনটা কঠিনই ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। কঠিনর কন্ডিশনে স্বাগতিক দলের আধিপত্যটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু তাই বলে মাশরাফির দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত ছিল না ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে! অসহায়ভাবে হার মেনে নেওয়া, লড়াকু মনোভাবের অনুপস্থিতি, নিস্তরঙ্গ শরীরী ভাষা—বাংলাদেশ দল যে এসব অতীতের বিষয় বানিয়ে ফেলেছে, ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাবনাটা তো ছিল এমনই। নিউজিল্যান্ডে গত আড়াই বছরে ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’ ছিল একেবারেই অনুপস্থিত।
কিউইদের মাটিতে কেন হঠাৎ কঙ্কালটা বেরিয়ে পড়ল? মাশরাফি বিন মুর্তজা ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘পাঁচ বছর পর আমরা এখানে খেলছি, মানিয়ে নেওয়া (কন্ডিশনের সঙ্গে) কঠিন।’ অধিনায়কের কথা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সিরিজের আগে সিডনিতে প্রস্তুতি ক্যাম্প, আগেভাগেই নিউজিল্যান্ডে পা রাখার পরেও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারাটা নিশ্চয়ই বড় ব্যর্থতা।
কন্ডিশনের জুজু ওয়ানডে সিরিজে ছিলও না। ক্রাইস্টচার্চের পর নেলসনেও উইকেট ছিল সহজ, ব্যাটিংবান্ধব। অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই বলেছেন, ‌‘দেশের উইকেটের মতোই।’ যদি উইকেট ভীতি–জাগানিয়া না-ই হয়, তবে নিজেদের ‘প্রিয় সংস্করণে’ কেন বাংলাদেশের এই ভরাডুবি?
সবার আগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ব্যাটসম্যানদের। নেলসনে শেষ দুটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যর্থতায় বড় দায় তাঁদেরই। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৫২ রানের লক্ষ্যে ১ উইকেটে ১০৫ তুলে ফেলা দলটাই শেষ পর্যন্ত ১৮৪ রানে অলআউট। আর আজ? তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েস যেভাবে শুরু করেছিলেন, বাংলাদেশের স্কোর ৩০০ পেরোবে—এমনটাই অনুমেয় ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি টেনেটুনে হলো ২৩৬! দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৯ রানে ৯ উইকেট হারানো দলটিই আজ শেষ ৭ উইকেট হারাল ৭৭ রানে।
সিরিজে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের পার্থক্যটা এই পরিসংখ্যানে বোঝা যাবে—৩ ম্যাচে ২২৮ রান করে সবার ওপরে নিল ব্রুম। সমান ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান ইমরুলের, ১১৯। সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুই কিউই ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশের কেউ তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
পরাজিত দলের অনেক ভুলই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তবে একটি জিনিস না বললেই নয়, সেটি হলো দল নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারটি সাফল্যের সময়ও হয়েছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ফাটকা কাজে লেগেছে, কখনো লাগেনি। এই সিরিজেও তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থেকেছে। গত মার্চের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা অক্টোবরের ইংল্যান্ড সিরিজে কোচের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল।
কদিন আগেও দৃশ্যপটে না থাকা তানবির হায়দারকে খেলানো নিয়েই এবার বেশি প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই তিনিসহ অভিষেক হলো তিন ক্রিকেটারের। নেলসনের উইকেটে ছন্দ হারিয়ে ফেলা সৌম্য সরকারকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া যেতে কি না, সেটি নিয়েও কথা হচ্ছে। একটু অবাক করার মতো বিষয়, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল পেসার রুবেল হোসেনকে একবারও বিবেচনা করেননি হাথুরুসিংহে।
প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের ৩৪১ রানের জবাব দেওয়ার সাধ্য বাংলাদেশের ছিল না, সেটি না হয় মানা গেল। কিন্তু পরের দুটি ম্যাচে কিউইদের হাতের নাগালে পেয়েও কেন কবজা করা গেল না? মাশরাফি বলছেন, ‘দল হিসেবে না খেলায় আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।’ একটা সময় বাংলাদেশ অনিয়মিত জিতেছে এক-দুজনের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের সৌজন্যে। কিন্তু যখন তারা ‘দল হিসেবে’ খেলতে শুরু করেছে তখনই ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সেটি যে একেবারেই দেখা যায়নি।
এই সিরিজে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো বেশির ভাগই ব্যাটিং-সংক্রান্ত। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইমরুল-সাব্বিরের জুটিটা দারুণভাবে এগোচ্ছিল। এই জুটি ভাঙার পরই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ল বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতেও একই ছবি। তামিম-ইমরুলের ওপেনিং জুটি ভাঙার পরই খেই হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সেটির প্রভাব পড়ল ফলেও। একটি বড় জুটি ভাঙার পর আরেকটি কেন হলো না, কিংবা দু-একজন বাদে অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই কেন ব্যর্থ—প্রশ্নগুলোর উত্তর বাংলাদেশ যত দ্রুত খুঁজে পাবে ততই মঙ্গল।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ