দিনাজপুরে ফসলি জমি ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে ইট

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: দিনাজপুরে ফসলি জমি ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে ইট। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি। এতে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসলের উৎপাদন শক্তি।

জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১’শ ৭৬টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিরল উপজেলায় ১৭টি, সদর উপজেলায় ২৩টি, বোচাগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি, কাহারোল উপজেলায় ৫টি, বীরগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি, খানসামা উপজেলায় ৬টি, চিরিরবন্দর উপজেলায় ১৯টি, পার্বতীপুর উপজেলায় ৩০টি, বিরামপুর উপজেলায় ৭টি, হাকিমপুর উপজেলায় ১টি, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৮টি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৯টি ও ফুলবাড়ি উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৯টি রয়েছে ইটের ভাটা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে আবাদি জমির উপর। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে জমির উপরিভাগের মাটি। জমির মালিকরা মাটির গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় টাকার আশায় এসব মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে ইটভাটা মালিকদের কাছে। উপরিভাগের মাটি কেটে ফেললে আবাদ ভালো হবে-জমির মালিকদের এমন বুঝিয়ে ইটভাটা মালিকরা দালালের মাধ্যমে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে বলছেন এলাকাবাসীরা।

সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে, এক থেকে দেড় ফুট মাটি কেটে নেয়ার শর্তে প্রতি বিঘা প্রতি জমির মালিককে দেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিরল উপজেলার হাসিলা গ্রামের সোহরাব হোসেন জানান, তিনি এক ফুট গভীরতায় মাটি কেটে নেয়ার শর্তে ইটভাটা মালিকের কাছে এক একর জমির মাটি বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকায়।

ইটভাটা মালিকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ইটভাটায় বছরে ৩০-৩৫ লাখ ইট উৎপাদিত হয়। দিনাজপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বকুস জানান, ১ হাজার বর্গফুট মাটি দিয়ে ইট তৈরি হয় ৮ হাজার ৫’শ। এর জন্য ১’শ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট প্রস্থ আকারে জমির মাটির কাটার প্রয়োজন হয়।

এই হিসেব অনুযায়ী ৩০ লাখ ইট তৈরির জন্য ৩ লাখ ৫৩ হাজার বর্গফুট মাটির প্রয়োজন হয়। এতে প্রতিবছর প্রায় ৬ কোটি বর্গফুট মাটির প্রয়োজন হয় জেলার ১৭৪টি ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য। আরেক হিসেব অনুযায়ী একেকটি ইটভাটায় প্রতিবছর ইট তৈরির জন্য ১২ থেকে ১৫ একর জমির উপরিভাগের মাটি কাটতে হয়। এতে জেলার ১’শ ৭৪টি ইটভাটার প্রতি বছর কাটতে হয় প্রায় ২ হাজার ৫’শ একর জমির উপরিভাগের মাটি।

পরিবেশবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকারি আইন অনুযায়ী একটি ইটভাটার জন্য মোট ২ একর মাটি কাটার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ইটভাটা মালিকরা তা উপেক্ষা করে প্রতিটি ভাটায় ১২ থেকে ১৫ একর আবাদি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. মনছুর রহমান জানান, উদ্ভিদের জন্য যা পুষ্টির প্রয়োজন, তা থাকে মাটির উপরিভাগে।তিনি বলেন, মাটির উপরিভাগের ৮ ইঞ্চির মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বোরন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংকসহ ১৩ ধরনের পদার্থ থাকে। যা উদ্ভিদ বা ফসলের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ার ফলে এসব পদার্থ চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। এটি ফসলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ