তামিমের হাজার রান দিয়েই শেষ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ২০১৬ সালে টেস্টে বছর ১ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানই আছেন সাতজন আর ওয়ানডেতে সেটি দুজন। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে বছরের শেষ ওয়ানডেতে ৫৯ রানের ইনিংসটা খেলে তামিম ইকবাল হাজার রানের একটি তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। তিন ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে ২০১৬ সালে ২২ ম্যাচে ১০০৬ রান করেছেন তামিম।
বাঁহাতি ওপেনারের ২১ ম্যাচে ছিল ৯৪৭ রান। ৫৩ রান লাগত তামিমের। তামিম সেটা পূর্ণ করেই শেষ করেছেন বছরটা। গত বছর তামিমের সেঞ্চুরি ৩টি, চার ফিফটি। এক পঞ্জিকাবর্ষে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যানও হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত বছর তামিমের পরেই আছেন সাব্বির রহমান। ২৭ ম্যাচে ৪ ফিফটিতে ৭৭৫ রান। সমান ম্যাচে ৬১৯ রান করে মাহমুদউল্লাহ তিনে, আর ৬১৮ রান করে সাকিব চারে। আর কারও ৬০০ রান নেই। ৫০১ রান করেছেন ইমরুল কায়েস, সেটি ১২ ম্যাচে। ইমরুল কতটা কম সুযোগ পান এখান থেকে বোঝা যেতে পারে। আর এও বুঝতে পারবেন, ৪৩২ রান তুলতে ২৩ ম্যাচ খেলা মুশফিকুর রহিমের কতটা বাজে কেটেছে গত বছর।
মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ অবশ্য লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিল। এ বছরে বাংলাদেশ টেস্টই খেলেছে মাত্র দুটি। ২ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ২৩১ রান করে শীর্ষে তামিমই। টেস্টে ১৪৩ রান করে দুইয়ে ইমরুল আর ১১৫ রানে করে তিনে মাহমুদউল্লাহ।
ওয়ানডেতেও সবার ওপরে তামিম, ৯ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৪০৭ রান। ৭ ম্যাচে ৩২৫ রান ইমরুলের। দুজনেরই গড় ৪৫-এর ওপরে। ওপেনার হিসেবে যেটি বেশ ভালো। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে গত বছর ওয়ানডের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিকের গড় ২৮! ৯ ম্যাচে ২৫২ রান করেছেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ (২৮.৬২) ও সাব্বিরের (২৩.৭৭) গড় বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের দৈন্য দশার সাক্ষী হয়ে আছে। মুশফিকের গড় (৩৯.৬০) বেশ ভালো দেখাচ্ছে দুটি নট আউট ইনিংস ছিল বলে। না হলে ৭ ওয়ানডেতে ১৯৮ রান দেশে মুশফিক নিজেই লজ্জা পাবেন।
২০১৬ সাল বাংলাদেশের চাপ নিতে না পারা, ভালো অবস্থায় থেকেও ম্যাচ থেকে একপর্যায়ে ছিটকে পড়ার বছর। আর এর মূল দায় নিতে হবে মিডল অর্ডারকেই।
টি-টোয়েন্টিতে রানে শীর্ষে সাব্বির। ১৬ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন ৪৬৩ রান। ৩৬৮ রান করে দুইয়ে থাকা তামিম অবশ্য ৫ ম্যাচ কম খেলেছেন।
বোলারদের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে সফল ছিলেন সাকিব। ২৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪৬ উইকেট নিয়েছেন। এর পর আছেন মাশরাফি। ২৫ ম্যাচে সমান উইকেট। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েও দলে ব্রাত্য আল আমিন, বছর শেষের পরিসংখ্যান আবারও তাঁকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বলছে। ১৯ ম্যাচে ২১ উইকেট তাসকিনের, স্ট্রাইক বোলারের যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠতে পারেননি। বছরের বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকেও ১০ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে সেরা পাঁচে থেকে শেষ করেছেন মোস্তাফিজ।
১ উইকেটের জন্য সেরা পাঁচে জায়গা পেলেন না। তবে মেহেদী মিরাজের ১৯ উইকেট এসেছে মাত্র ২ ম্যাচ খেলেই! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক সিরিজে।
টেস্টে মিরাজই যে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন গত বছর, তা বলে না দিলেও চলছে। গত বছর ২ টেস্টে ১২ উইকেট সাকিবের। তাইজুল নিয়েছেন ৭ উইকেট। ১ উইকেট কামরুল ইসলামের। টেস্টের সেরা পাঁচ করা যাচ্ছে না, কারণ এই চারের বাইরে আর কারও উইকেট নেই। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ২ টেস্টে বাংলাদেশ গত বছর ৩৯ উইকেট নিয়েছে। তার মানে প্রতিপক্ষকে চার ইনিংসেই প্রায় অলআউট করে ফেলেছিল দল!
ওয়ানডেতে সেরা তিনের মধ্যে বেশ ‘লড়াই’ হয়েছে। ৯ ম্যাচে মাশরাফির ১৫ উইকেট। সাকিব ও তাসকিনের উইকেট ১৪টি করে। ৮ ম্যাচে ৬ আর ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েও ‘সেরা’ পাঁচে জায়গা পেয়েছেন মোসাদ্দেক ও শফিউল। এর মধ্যে মোসাদ্দেক পার্ট টাইম বোলার।
এ বছরটা ছিল বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির বছর। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আল আমিন। আবারও সেই একই প্রশ্ন—কেন নেই তিনি দলে। ২০ উইকেট সাকিবের। শুধু ২ উইকেট পেছনেই নেই, আল আমিনের চেয়ে ২ ম্যাচ বেশিও খেলেছেন সাকিব। ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে আলো ছড়াচ্ছেন মোস্তাফিজ। এর মধ্যে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। যেটা টুর্নামেন্টেরই সেরা বোলিং হয়ে আছে। ১৬ ম্যাচে ১০ উইকেট মাশরাফির। ১০ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন।
গত ম্যাচে ৫৫ রান দিয়েও উইকেট শূন্য ছিলেন সাকিব। ৪ উইকেট দরকার ছিল তাঁর। তাহলে গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০ উইকেট পূর্ণ হতো। তামিম পারলেও সাকিব কিন্তু পারেননি সমীকরণটা মিলিয়ে দিতে।