হুন্ডি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ অভিযুক্ত
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সোনা চোরাচালান মামলায় ‘হুন্ডি ব্যবসায়ী’ এস কে মোহাম্মদ আলী, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। গত নভেম্বরে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) গোলাম সাকলায়েন বলেন, পল্টন থানার এই সোনা চোরাচালান মামলায় এস কে মোহাম্মদ আলীকে প্রধান আসামি করে গত ২ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। আদালত সূত্র বলছে, মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ হয়েছে।
আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে, মামলার অপর অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন মজিবুর রহমান চৌধুরী, সালেহ আহম্মেদ, এস এম নুরুল ইসলাম, আবু আহম্মেদ, নবী নেওয়াজ খান, ওমর ফারুক, আলী হোসেন মুন্না, বাবু, উজ্জ্বল ঘোষ ও পংকজ সাহা। ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর পল্টনের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা পাঁচ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ৬১ কেজি ওজনের ৫২৮টি সোনার বার উদ্ধার করেন। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ আলী (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বালিশের কভার, সোফার কুশনের ভেতর, জাজিম-তোশকের নিচে, আলমারি ও বাসার ফলস (কৃত্রিম) ছাদের ওপর পাওয়া যায় পাঁচ বস্তা দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও সোনার বার। এ ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, সোনা চোরাচালানে এস কে মোহাম্মদ আলীসহ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ জড়িত।
জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘সোনা চোরাচালান মামলায় পুলিশ আমার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এটি সাজানো মামলা।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি এস কে মোহাম্মদ আলীসহ অন্য আসামিরা সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য। পরস্পরের যোগসাজশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে সোনার বার এনে বাসায় জমা রাখতেন। পরে আসামি উজ্জ্বল, বাবু ও পংকজদের সহায়তায় সোনা বিক্রি করে আসছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, এ মামলায় পলাতক রয়েছেন নয়জন আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। আর গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এস কে মোহাম্মদ আলী। জামিনে রয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন ও মুজিবর রহমান চৌধুরী।
পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে, পল্টনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া মুদ্রার মধ্যে দেশীয়, সৌদি ও ভারতীয় মুদ্রা রয়েছে। উদ্ধার হওয়া সোনার পরিমাণ ৬১ কেজি। এর আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকে রাখা নিরাপদ মনে না করায় আসামি মোহাম্মদ আলী সাড়ে চার কোটি টাকা ও ১৫ লাখ সৌদি মুদ্রা বাসায় রাখেন। মোহাম্মদ আলী হুন্ডির আড়ালে মুদ্রা ও সোনা চোরাচালান ব্যবসা করে আসছিলেন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে, আসামি মোহাম্মদ আলীর বাড়ি যশোরে। তাঁর বাবার নাম এস কে শের আলী। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে ঢাকায় এসে ফেরি করে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি শুরু করেন। পরে তাঁরা সিলেটেও শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করতেন। ১৯৮৬ সালে তিনি সিলেটে বিয়ে করেন। সেখানে ব্রিটিশ পাউন্ড কেনাবেচায় জড়িত একজনের কাছে মুদ্রা বেচাকেনা শেখেন। পরে মোহাম্মদ আলী রাজধানীতে এসে মতিঝিলে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা শুরু করেন।