ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসারা

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: “আপু প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুমি একটু কথা বল আমার সাথে।সামনে আমার ফাইনাল প্রফ।আমি জানি তুমি চ্যাটিং করা একদম পছন্দ কর না ।কিন্তু প্লিজ আপু it’s urgent. তুমি যা বলবা আমি তাই করব ।তুমি যদি মেসেজের রিপ্লাই না দাও আমি প্রফ দিতে পারব না ।”

প্রায় দশ পনেরো দিন আগে ইনবক্সে এমন একটি মেসেজ এসেছিল আমার।এটা ঠিক আমি ইনবক্সে রিপ্লাই আসলেই করি না কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।কিন্তু একজন মেডিকেল পারসন হিসেবে ফাইনাল প্রফের থ্রেট আমি ওভার লুক করতে পারিনি।হৃদয় এখনও এতটা পাষাণ হয়ে ওঠেনি।

বললাম–ওকে বল শুনছি।

—আপু আমি আর আমার bf ক্লাসমেট।ফাস্ট ইয়ার থেকে রিলেশন আমাদের।আমরা ব্যাচমেট, রিডিং পার্টনার, বেস্ট ফ্রেন্ড, সবকিছু।ও আমাকে খুব সাপোর্ট করে লেখাপড়ার এবং অন্য সব ব্যাপারে।ও খুব বাচ্চা টাইপ।তাই আমিও ওকে খুব দেখেশুনে রাখি।আমাদের মাঝে বোঝাপড়াও খুব ভালো।আমাদের দু’বাসা থেকেও আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোন আপত্তি নেই ।

সমস্যাটা হলো আপু কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে ও আমাকে বলেছে— ও ওর এক্স gf কে kiss করেছে।আমি জানতাম মেডিকেল কোচিং করার সময়ে ওর একটা রিলেশন ছিল ।পরে মেয়েটি সরকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় ওকে dump করে।আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই ও আমাকে এটা বলেছিল।আজ পাঁচ বছর পর ও যখন এ কথা বলল,আমার ভালো লাগছে না আপু।আমার সব কিছু অসহ্য মনে হচ্ছে।ও কি চিট করল আমার সাথে ? আমি তো কখনও অন্য কারো সাথে সম্পর্কই করিনি।আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না ও আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের সাথে কিছু করেছে।আমি কি ব্রেক আপ করে ফেলব আপু ? ও সরি বলেছে আমাকে।কিন্তু আমার ওকে সহ্য হচ্ছে না একদমই ।লেখাপড়াও কিছু করতে পারছি না।ক্লাসমেট বা বাসাতেও কারো সাথে এ কথা শেয়ার করতে পারছি না।শুধু মনে হচ্ছে, তুমি আমাকে সঠিক একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।
কি করব আমি ?
প্লিজ আপু হেল্প মি।

বললাম— তুমি যা করবা তা হলো ঠান্ডা মাথায় প্রফ দিবা।ডাক্তার হবা। সিম্পল।

আর সম্পর্কের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অবশ্যই তোমার, তোমাদের।তবে আমরা আলোচনা করতে পারি।

প্রথমত- দেখ মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ হচ্ছে বর্তমান।অতীত শুধুই জীবনের একটা অংশ।অতীত থেকে আমাদের অনেক কিছু
শিখতে হয়।কিন্তু অতীতকে টেনে এনে বর্তমানকে নষ্ট করার আসলে কোন লজিক নেই।

দ্বিতীয়ত- ছেলেটা অতীতে যাই করুক না কেন সে তোমাকে নিজ মুখে তা বলেছে।এটা খুব appreciate পাবার মতো একটা কাজ।সবাই সাধারণত অতীতের নেগেটিভ কথাগুলো এড়িয়ে যায়।যদিও পাঁচ বছর পরে বলেছে যা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে।কিন্তু ভেবে দেখতো সম্পর্কের শুরুতে নিশ্চয়ই তোমরা এতটা ক্লোজ ছিলে না, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াও এতটা মজবুত ছিল না। সম্পর্কের শুরুতে এ কথা বললে হয়তো সম্পর্কটাই তৈরি হতো না তোমাদের।আজ দেখ তোমাদের সম্পর্ক কতটা মজবুত যে তোমরা পরষ্পরের সিক্রেট সহজেই শেয়ার করতে পারছ।এটাই তো সম্পর্কের achievement.

তৃতীয়ত-কিস/টাচ কিংবা ধর physical relationship অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সমাজে যেহেতু এসব ইস্যুতে বেশ কিছু ট্যাবু খুব সূক্ষ্ম ভাবে ছোটবেলা থেকেই মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তাই আমরা সহজে ঝেড়ে ফেলতে পারি না।
এখন কথা হলো, ধর্মীয় মতে যদি ভাব এই যে তোমাদের পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক এটাও কিন্তু অনুচিত।তাই না ? এমন অনেক অনুচিত কাজ আমরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অনেক সময়ই করে ফেলি।
ধর্মীয় এবং সামাজিক ভাবে ডিভোর্স স্বীকৃত।এখন যাদের ডিভোর্স হয় তারাও অনেকেই পরবর্তীতে আবার বিয়ে করেন।এখন যদি এটা ভাবা হয়, ওর তো আগে বিয়ে হয়েছিল তাহলে তো অনেক গোলমাল হয়ে যাবে, তাই না ?

এতো গেল নিয়মকানুন মেনে physical contact এর কথা।আবার ভাব আমাদের আশেপাশে কত শত ছেলে মেয়ে বিয়ে না করেই ক্লোজ হচ্ছে, অনেকের বিয়ে হচ্ছে আবার অনেকের হচ্ছে না।তারা দুজন অন্য দুজনকে বিয়ে করে দিব্যি সুখে শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছেন।আসলে পুরোটাই নির্ভর করছে তোমার দেখার এবং গ্রহন করার মানসিকতার উপর।

সবশেষে একটা কঠিন উদাহরণ দেই কেমন।যেহেতু তুমি মেডিকেল স্টুডেন্ট সেহেতু খুব ভালো করেই জানো ফরেনসিক মেডিসিনে আমরা পড়েছিলাম —- ভিকটিমের একটা ভালো শাওয়ার রেপ কেসের মতো বিভৎস ঘটনারও সমস্ত প্রমান এক মুহূর্তেই শেষ করে দিতে পারে; hope you get my point.

সিনিয়র আপু হিসেবে একটা কথাই বলব — দুজনে মিলে প্রফটা superb দাও।হুট করে না বরং সময় নাও যেকোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে।
মন খারাপ ঝগড়া করার বহু টাইম পাবা ডাক্তার হয়ে যাবার পরে। আর একজন সত্যবাদী ছেলে জীবনে পার্টনার হিসেবে পাওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার।অনেকেই জীবনে ভুল করে কিন্তু ভুল স্বীকার সবাই করতে পারে না।

That’s all.
অনেক শুভকামনা আর ভালোবাসা তোমাদের জন্য।

গতকাল ফাইনাল প্রফের প্রথম রিটেন ছিল।সন্ধ্যায় মেয়েটি মেসেনজারে আমাকে কল করেছিল।জানাল–তাদের দুজনেরই পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে।ছেলেটিও কথা বলেছ আমার সাথে।তাদের বিয়েতে আমাকে নাকি যেতেই হবে, যেতেই হবে এবংঅবশ্যই যেতে হবে।

লেখক ডা. নাসিমুন নাহার

জনপ্রিয় কলাম লেখক

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ