মার্কেটেই ব্যবসা করতে চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ‘আমরা এখানেই থাকতে চাই। ব্যবসা করতে চাই। আমাদের তো সব শেষ। কিছুই নাই। এখন চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। কাঁদতেও পারছি না।’ কথাগুলো বলছিলেন মাসুদ নামের ব্যবসায়ী। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশান কাঁচাবাজার মার্কেট মালিক সমিতির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তাঁর মতো ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০০ দোকান মালিক এ সমাবেশে হাজির হয়েছেন।
গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট আগুন লাগে। এতে মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশটি ধসে পড়ে। আর পুড়ে যায় পাকা মার্কেটের অনেক দোকান। এখনো মার্কেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোয়ার বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস তা নেভাতে কাজ করে যাচ্ছে।
এ ঘটনায় আজ দুপুরে মার্কেটের প্রবেশ পথে আলাদা আলাদাভাবে সমাবেশ করছেন কাচা মার্কেট মালিক সমিতি ও পাকা মার্কেট দোকান মালিক সমিতি। সমাবেশ থেকে এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও ক্ষতিগ্রস্তদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে এরপর নির্মাণকাজ শুরুর আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ২২ বা ২৩টি ইউনিটের কথা বলা হলেও আসলেই এসেছিল কি না, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তা তদন্ত করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, খোলা জায়গাসহ ডিএনসিসি মার্কেটটির আয়তন প্রায় ১ লাখ ৮০০ বর্গফুট। পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বিস্তৃত মার্কেটটির পাশাপাশি দুটি ভবন রয়েছে। পশ্চিম দিকের দোতলা ভবনটি ‘পাকা মার্কেট’ নামে পরিচিত। এটির নিচতলায় ফার্নিচার এবং দ্বিতীয় তলায় পোশাক, জুতা ও খেলাধুলার পণ্য বিক্রির খুচরা ও পাইকারি বাজার। পূর্বাংশে ‘কাঁচা ও সুপার মার্কেট’ নামের ভবনটি চারতলা। এর নিচতলায় কাঁচাবাজারের দোকান ও ওপরের তলাগুলোতে প্রসাধন ও খাদ্যপণ্যের পাইকারি দোকান। ধসে পড়া এই ভবনে ৪০০টি দোকান ছিল।
কাঁচা মার্কেটের নিচতলায় লাবিব করপোরেশন নামের এক দোকানি ইয়াসির আরাফাত। তিনি বলেন, তিন মাস আগে ১৩ লাখ টাকা দিয়ে এখানে তাঁর বড় ভাই দোকান নেন। দোকান চালাচ্ছিলেন তিনি। এখানে বিদেশ থেকে আনা, বিশেষ করে মালয়েশিয়া থেকে আনা কোমল পানীয়, সস, কাজু বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী ছিল। যার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে তারা ২০ লাখ টাকা পাবেন। সেসব হিসাব নিকেশেরও কাগজও দোকানে ছিল। মার্কেট ধসে পড়ায় তাঁরা দোকানে যেতে পারছেন না। ইয়াসির বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষার জন্য তিন মাস পর আমার রাশিয়া যাওয়ার কথা। এই দোকানের আয়-রোজগার দিয়ে যাব ভেবেছিলাম। এখন যাওয়া তো দূরের কথা, . টেকা দায়! আমাদের প্রথম চাওয়া হলো, এখানে আমাদের আগের মতো দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হোক।’
দুপুরের দিকে মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন দোকান থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। বাতাস বাড়লে ধোয়ার মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে পাকা মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, যেহেতু তাদের ভবনটি ধসে পড়েনি, তাই সে জায়গাটিকে মেরামত করে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতি দাবি জানান তারা।
সমিতির কোষাধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালিয় যাচ্ছি। আমাদের একটাই দাবি, আমরা এখানে ব্যবসা করতে চাই। মার্কেট চালুর উদ্যোগ এবং মেরামতের আর্থিক বিষয়ে তিনি বলেন, সে দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। কারণ এটি সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান।
এখনো মার্কেটের অনেক দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পানি ছিটাচ্ছেন।
দোতলায় সিঁড়ি থেকে কিছুটা ঢুকলেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এরই মধ্যে অনেক দোকানি দোকানের শাটার খুলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। সেখানে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র থেকে ধোয়া বের হচ্ছে।
ভিআইপি জুয়েলারির মালিক শাহ আলম তাঁর দোকানের সামনে বলেন, এখানে আমার তিন কোটি টাকার গয়না ছিল। বিভিন্ন ক্রেতাকে ডেলিভারি দেওয়া কথা। এখন বিয়ের মৌসুম। আমার পণ্য সামগ্রী সব পুড়ে গেছেই, এখন আমরা ডেলেভারিও দিতে পারছি না।
রজনীগন্ধা স্টোর নামের সাইকেলের দোকান মালিক আখতার। তিনি জানান, তাঁর দোকানে বিভিন্ন ধরনের ১৩ লাখ টাকার সাইকেল ছিল। এখন স্কুলে চাপ কম থাকায় অনেক অভিভাবক সন্তানদের সাইকেল কিনে দিচ্ছিলেন। বেচাকেনা ভালো ছিল। কিন্তু বছরের শুরুতেই আগুনের ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।
বিভিন্ন দোকানির ভাষ্য, আগুনে তাদের ট্রেড লাইসেন্স, দোকানের বরাদ্দপত্র, কিছু ক্যাশ টাকা, ক্রেতাদের কাছে বাকিতে পণ্য বিক্রির কাগজপত্র সব পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর এমরান হোসেন বলেন, পানি ছিটানোর কারণে পুড়ে যাওয়া মালামাল স্তূপ আকারে জমাট বেঁধে গেছে। তাই অনেক জায়গায় পানি ঢুকছে না। যেসব জায়গা থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। তা নেভাতে পানি দেওয়া হচ্ছে।