শীতেও সুস্থ উজ্জ্বল ত্বক
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: গাছের পাতায় হলুদ পরশ দেখে নয়, শীত বোঝা যায় উত্তরের বাতাসে বয়ে আসা প্রথম হিম হিম পরশে ত্বকের শিউরে ওঠায়। শীতের মূল সমস্যাও এটা। প্রবল শীতে আপনি মাফলার কিংবা হাল আমলের জ্যাকেট চাপিয়ে বের হয়ে যেতে পারবেন অনায়াসেই। কিন্তু একটু একটু করে প্রতিদিন শুষ্ক হয়ে আসা ত্বকের যত্নে প্রয়োজন অন্য কিছু।
শুষ্ক ত্বকের নানা সমস্যা
শীতে ত্বকের বাহ্যিক কোষগুলো শুকিয়ে আসে। আর ত্বকের মধ্যেই পরতে পরতে জমতে থাকে। মৃত কোষ জমে গেলে কমবেশি সবার ত্বকই মলিন হয়ে ওঠে। এর মধ্যেও তৈরি হয় পার্থক্য, ত্বকের ধরনে ভিন্নতার কারণে। সবার ত্বকেই কমবেশি তেলগ্রন্থি থাকে। প্রতিদিনের কাজে একটু একটু করে তেলগ্রন্থি তৈরি হয়, যা ত্বকের স্বাভাবিক নমনীয়তা ধরে রাখে। যাদের তেলগ্রন্থি তুলনামূলক কম থাকে, তাদের ত্বকই মূলত শুষ্ক হয়ে ওঠে। রুক্ষ আবহাওয়া, সাবানের ক্ষার, ডিটারজেন্ট কিংবা অ্যাসিড মেশানো উপাদান নিয়ে যাঁরা প্রতিদিন কাজ করেন, তাঁদের প্রত্যেকেই শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। আর সমস্যাগুলোও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয় মোটেই। সারাক্ষণ খসখসে অস্বস্তি, র্যাশ, চুলকানির ভাব, সাদাটে দাগ, দ্রুত আঁচড় পড়ে যাওয়া, সামান্য খোঁচাতেও ঘা হওয়া শুষ্ক ত্বকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে খারাপ সমস্যাটি সম্ভবত বলিরেখার, যেটা বয়স না হতেই প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। আবার শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই কনুই, গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফাটা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। বংশগত কারণ কিংবা চর্মরোগ না থাকলেও শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের ত্বক সাধারণ নিয়মেই এমন সমস্যা তৈরি করতে থাকে।
ত্বক থাকুক কোমল
সুস্থ ও কোমল ত্বক মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শর্ত। একে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য। সুস্থ ত্বকের ৯০ শতাংশ জুড়ে থাকে পানি, যা ত্বকে ময়েশ্চার জোগায়, ত্বককে নমনীয় রাখে এবং সর্বোপরি শরীরকে সুরক্ষা দেয়। শুষ্কতার সমস্যাগুলোর কারণে স্বাভাবিক আর্দ্রতা জোগানোর ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই ত্বক স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখতে জোগান দিতে হয় বাড়তি আর্দ্রতা বা ময়েশ্চারের। শুষ্কতা দূর করতে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে হবে। সচরাচর যেসব কাজ করি, সেগুলোতে আনতে হবে একটু পরিবর্তন।
শীতে গরম কাপড় লাগেই। উল ও খসখসে বুননের কাপড় ত্বকের ক্ষতি করে। যতই বলি ত্বকের জন্য উল ক্ষতিকর, উষ্ণতা আনতে উলের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই উলের কিছু পরতে হলে সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই ইনার হিসেবে নরম সুতির কিছু পরে নিতে হবে, যেন বুননের খসখসে ভাব ত্বকের আর্দ্রতা টেনে না নেয়। রান্নাঘরে কাজ করতেই হয় গৃহিণীদের। সাবানের ফেনা, বাসনের ময়লা এবং কালি, হাতের চামড়া ক্রমশ শক্ত করে তোলে। এর ফলে নখের পাশের নরম চামড়া ফেটে যায়, কিউটিকল রুক্ষ হয়ে ওঠে। শীতকালে অনেকের চামড়ায় সাদা সাদা ফুটকির মতো হয়। যার ফলে চামড়ার কিছু অংশ উঠতে থাকে। যে হাত প্রতি বেলায় আপনার জন্য কাজ করে চলেছে, তার যত্ন তো একটু বেশিই হওয়া চাই। যতটা সম্ভব পানি কম স্পর্শ করবেন। ধোয়ামোছার সময় নিয়মিত গ্লাভস ব্যবহার করুন। আর ধোয়ামোছা শেষ হওয়ার পরপরই ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন লাগান। সবজি কাটার পরে অনেকের হাতে কালচে দাগ পড়ে। সেটি দূর করার জন্য কাটাকাটির পরেই হাত ধুয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
চাই ময়েশ্চার
শীতের অলস বেলায় আগুনের কাছে এক মগ চা বা বই হাতে জাঁকিয়ে বসতে কার না ভালো লাগে। কুয়াশা জমা সন্ধ্যা কিংবা ভোরে এমনটা না করলে অনেকের কাছে শীতকে শীত বলেই মনে হয় না। মায়ের মাটির চুলোর কাছে বসে পিঠাপুলির স্বাদ নিতে নিতে আগুনে হাত-পা সেঁকার অনুভূতি, এখনো অনেকের কাছে নস্টালজিয়ার বিষয়। তবে আগুন বা রোদ পোহানো যা-ই হোক, তারও একটা মাত্রা মেনে চলতে হবে। অতিরিক্ত তাপে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়। অনেকের ঘরে হিটার থাকে, তার তাপমাত্রাও যতটা কম রাখা যায়, তত ভালো। দিনের বেলা রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে হবে। রাস্তার ধুলোবালি জমে ত্বকে মৃত কোষের ভার বাড়িয়ে তোলে। তা থেকেও আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে সানস্ক্রিন ও সানব্লক।
শীতের সঙ্গী পেট্রোলিয়াম জেলি
ত্বক ভালো রাখতে গোসলের বিকল্প নেই। সেখানেও আছে সতর্কতার ব্যাপার। অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়। অতিরিক্ত গরম পানি এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিও ত্বকের ক্ষতি করে। গোসলের পানি, তাপমাত্রা আর বাষ্পের ভারসাম্য ঠিক রাখতে, গোসলের সময় বাথরুমের দরজা ও জানালা বন্ধ করে রাখা উত্তম। পানি হবে ঈষৎ উষ্ণ। সাবান ক্ষার ও সুগন্ধমুক্ত হওয়া চাই। আর ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল করা যাবে না। আর গোসল শেষে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে নরম সুতি কাপড়ের তোয়ালে। কখনোই ঘষে ঘষে গা মোছা যাবে না। গোসলের পরে যত দ্রুত সম্ভব পেট্রোলিয়াম জেলি বা ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে পুরো শরীরে। বলা হয়, শীত মানেই ময়েশ্চারাইজার। তবে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, যাতে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই; যা ত্বককে একটি চিরস্থায়ী সমস্যায় ফেলে দেবে না এবং অবশ্যই যা ত্বকের জন্য মানানসই। ময়েশ্চারাইজারের আরেকটি অসাধারণ গুণ হলো ত্বককে সুস্থ করার ক্ষমতা। একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে তাকে ঝলমলে করারও ক্ষমতা রাখে।
ত্বকের সুরক্ষায় আমাদের প্রয়োজন শতভাগ বিশুদ্ধ পেট্রোলিয়াম জেলি। ময়েশ্চারাইজার কিনতে খেয়াল রাখতে হবে, সেটিতে পেট্রোলিয়াম জেলির উপাদান ঠিক আছে কি না। এটি মূলত মোম ও প্রাকৃতিক তেলের এমন একটি বিশুদ্ধ মিশ্রণ, যা ত্বককে বাড়তি আর্দ্রতার জোগান দেয় এবং ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতার ওপরে পরত তৈরি করে। পেট্রোলিয়াম জেলি শুধু ত্বককে আর্দ্রই রাখে না, বিভিন্ন সমস্যা থেকেও রক্ষা করে। যেসব পেট্রোলিয়াম জেলিতে সুগন্ধী এবং রং ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং পরিস্থিতিকে বিরূপ করে দেয়। তাই যেখানে ত্বকের স্বার্থ জড়িত, সেই ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
বিশুদ্ধ পেট্রোলিয়াম জেলি হিসেবে ১৪০ বছর ধরে ভ্যাসলিনের ওপর আস্থা রয়েছে সবার। যেকোনো আঁচড়, খসখসে অনুভূতি ও ফাটা ত্বকে ভ্যাসলিন তাৎক্ষণিক উপশম দেয়। ঠোঁটের ত্বকের সুরক্ষায় ও স্বাভাবিক গোলাপি আভা দিতে এর বিকল্প নেই। বলা হয়, রাতে ভ্যাসলিন মেখে ঘুমালে ত্বক রাতারাতি সুস্থ হয়। যাঁরা পায়ের রুক্ষতায় বিব্রত, তারা ঘুমানোর আগে বেশি করে ভ্যাসলিন মেখে মোজা পরে ঘুমাবেন। পায়ের পাতার রুক্ষতা ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
প্রতিদিন সকালে, গোসলের পরে ও রাতে ঘুমানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলবে। আর রুক্ষ ত্বকও হয়ে উঠবে ঝলমলে। শীতের রোদ ওঠা মিষ্টি সকালেরই মতো।