বাগানের স্কুলে চা-শ্রমিকের সন্তানদের ২৫ ভাগ কোটার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: লাক্কাতুরা চা-বাগানের জমি অধিগ্রহণ করে তৈরি নতুন সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে চা-শ্রমিকের সন্তানদের জন্য ২৫ ভাগ কোটা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আজ সোমবার বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী লাক্কাতুরা গলফ ক্লাব মাঠে চা-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে থেকে তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনায় তিনি বক্তৃতায় এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী চা-শ্রমিক সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে ২৫ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করতে স্থানীয় সাংসদ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানোর বিষয়টি চা-শ্রমিকদের আনুষ্ঠানিক জানান। তিনি বলেন, এত দিন এ এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করেছি, যাতে চা-শ্রমিকদের সন্তানদের ২৫ শতাংশের বেশি আসন দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চা-বাগানের শ্রমিকেরাও আমাদের দেশের নাগরিক। তাঁদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা উচিত। আমরা তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার চেষ্টা করছি। গত আট বছরে দেশে যত গরিব ছিল, তাদের সংখ্যা ৩০ শতাংশ থেকে সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি আমরা। দেশে সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা সমাজে বঞ্চিত ও যারা সমাজে সুযোগ পায় না, তাদের সুযোগ করে দেওয়া।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাজু গোয়ালার সভাপতিত্বে সংবর্ধনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বক্তব্য দেন।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন লাক্কাতুরা চা-বাগানের দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে সিলেট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নামে নতুন বিদ্যালয় স্থাপনকাজ শুরু হয়। শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় নয় কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগত কাজ শেষে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয় স্থাপনকালে চা-বাগান এলাকা হওয়ায় ভর্তির ক্ষেত্রে চা-শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ভর্তিপ্রক্রিয়ায় এ বিষয়টির কোনো উল্লেখ না থাকায় ক্ষুব্ধ চা-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। গত ৯ ডিসেম্বর থেকে চা-বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পর ১৭ ডিসেম্বর লাক্কাতুরা এলাকায় বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে কোটা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চা-শ্রমিকেরা একাত্ম হলে ওই দিন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘চা-শ্রমিক শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’। দাবি আদায় না হলে লাক্কাতুরাসহ মালনীছড়া, তারাপুর, দলদলি, ছড়াগাঙ, হিলুয়াছড়া ও আলীবাহার চা-বাগানে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ১০ ভাগ কোটা অঘোষিতভাবে চালু হয়।