অর্ধেকের বেশি পেনশন তোলা যাবেনা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সরকারি চাকরিজীবীর পেনশনের ৫০ শতাংশ পরিবারের জন্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে অবসরে যাওয়ার সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পেনশনের পুরা টাকা তুলে নিতে পারবেন না। তবে পেনশনের অর্ধেকটা তুলতে পারবেন। তবে বাধ্যতামূলক ৫০ শতাংশ পেনশনের ওপর প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন।
এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার জারি করেছে অর্থ বিভাগ। এটি আগামী পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বেসামরিক ও সামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন এ বিধান চালু করেছে। পেনশনধারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বার্থে বিধানটি চালু করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছরের ৩০ জুন বা তারপর যাদের অবসর-উত্তর ছুটি শেষ হবে, তারাই নতুন নিয়মের আওতায় আসবেন। তবে পেনশনার বা পারিবারিক পেনশনাররা মাসিক পেনশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন।
বর্তমানে কেউ চাইলে পুরো টাকা তুলে নিয়ে যেতে পারেন, আবার মাসে মাসেও নিতে পারেন। অর্থাৎ দুটি বিকল্পই খোলা আছে। নতুন বিধানের মাধ্যমে পেনশনের ৫০ শতাংশ মাসিক ভিত্তিতে নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি কর্মচারীদের শতভাগ পেনশনের টাকা তুলে নেয়ার পরিবর্তে ৫০ শতাংশেরই সুপারিশ করা হয়েছিল।
অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ গত রাতে জানিয়েছেন, ‘আমরা দেখেছি পুরো টাকা একসঙ্গে তুলে নিয়ে অনেক পেনশনার বিপদে পড়েছেন। কেউ ব্যবসা করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন, কেউবা সর্বস্বান্ত হয়েছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। তাদের অনেকে এখন সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন মন্ত্রণালয়ে। তাই পেনশনধারীদের সামাজিক সুরক্ষা দিতেই নতুন বিধানটি চালু করা হয়েছে বলে জানান অর্থসচিব।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পেনশন নিয়ে তার নতুন পরিকল্পনা এবং প্রবীণদের জন্য তার কাজ করার কথা বলেছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এত বয়সে কোথায় হাত পাতবেন প্রবীণেরা?’ বাজেট বক্তব্যে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চাহিদা পূরণের সহায়ক তহবিল সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই নতুন পেনশন-পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করে। বিভাগটি এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্রও তৈরি করে, যা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয় গত আগস্টে।
কর্মকর্তারা আরো বলেন, পেনশনভোগীদের পরিবারে অর্থের সংস্থান বজায় রাখা, সরকারের ওপর এককালীন আর্থিক চাপ কমানো এবং পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ করা— এ তিনটি দিক বিবেচনায় রেখে নতুন বিধানটি করা হয়েছে।
বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের পেনশন-ব্যবস্থার বর্তমান নিয়ম ১৯৯৪ সাল থেকে চালু। আর সামরিক সরকারি কর্মচারীদের বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থা চালু ২০০৩ সাল থেকে। বেসামরিক কর্মচারীদের জন্য নতুন বিধান কার্যকরের তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও সামরিক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি নতুন প্রজ্ঞাপনে।
বলা হয়েছে, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর জারি করা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শতভাগ পেনশন কম্যুটেশন সুবিধা দেয়ার স্মারকটি এই প্রজ্ঞাপনের আলোকে সংশোধন করবে।’ অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন।
পেনশনধারীদের নিয়ে সম্প্রতি তৈরি করা অর্থ বিভাগের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, বর্তমানে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারী রয়েছেন সাড়ে ৫ লাখ। যদিও এখনো অনেকে তথ্যভান্ডারের আওতায় আসেননি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে পেনশন ও গ্র্যাচুইটি খাতে ১৬ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। আগের অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, তার আগের অর্থবছরে ব্যয় হয় ৭ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা।
ইতিমধ্যে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন বিধানটিকে স্বাগত জানালেও খুব শিগগির অবসরে যাবেন এমন ব্যক্তিরা বিধানটিকে সমর্থন করছেন না। অর্থ বিভাগ এ বিষয়টিকেও বিবেচনা করেছে। নতুন নিয়মটি অবিবাহিতদের জন্য অসুবিধাজনক হবে। বিধানটিকে স্বাগত জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘পেনশনের অন্তত অর্ধেক সরকারের ঘরে রাখার যে বাধ্য বাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা খুবই ভালো উদ্যোগ।’