সব দল আইন তৈরির পক্ষে হলেও বিএনপি চায় সমঝোতা

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে নিবন্ধিত প্রায় সব দলের বিপরীত মত দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমান সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় কমিশন গঠনের জন্য এখনই আইন প্রণীত হোক, তা চায় না দলটি। তারা চায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার মাধ্যমে মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি কমিশন গঠিত হোক।
এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলেছে, এখনই উপযুক্ত আইন বা অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। সময়ের স্বল্পতার কারণে সম্ভব না হলে পরবর্তী কমিশন গঠনের সময় তা করা যেতে পারে। জাতীয় পার্টিসহ বেশির ভাগ দলই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য এখনই আইন প্রণয়নের পক্ষে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২৩টি দলের সংলাপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তিন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। আরেকজন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। যে কারণে রাষ্ট্রপতিকে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।
নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১৮ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। সব দলের মতামত নেওয়ার পর কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি একটি কমিটি গঠন করবেন। এরপর কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।তবে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান সাপেক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সর্বোচ্চ চারজন কমিশনার নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। কিন্তু অতীতে কোনো সরকারই সংবিধানের এই নির্দেশ মেনে আইন প্রণয়ন করেনি। সব সময়ই রাষ্ট্রপতি নিজ ক্ষমতাবলে কমিশন গঠন করেছেন। অতীতে যেসব কমিশন একতরফাভাবে গঠিত হয়েছে, সেগুলো সব দলের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল।

বিএনপি মনে করে, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আইন প্রণয়নে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না। এ কারণে এখনই আইন প্রণয়ন করা হলে সরকারি দল তা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী করে নেবে। তাই বিএনপি সমঝোতা বা দর-কাষাকষির মাধ্যমে মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি কমিশন গঠনের পক্ষে।

গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আলোচনায় তারা কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন, এই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ—আরপিও) সংশোধনের দাবিসহ ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়।

বিএনপি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির অনুসন্ধান কমিটিকে গুরুত্ব দিয়ে তারা এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ করা না গেলে শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যাবে না। তাই তারা কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টিকে জরুরি মনে করে না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন করতে চাইলে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা জরুরি। তা না হলে কী নিয়ে আইন হবে, সেটা স্পষ্ট হবে না। যাঁরা আইনের কথা বলছেন, তাঁরা না বুঝে বলছেন। আইনের জন্য নির্বাচন ঠেকে থাকে না। নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে।

বিএনপির মতো কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেনি। তারা গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে।

তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হাতে সময় অল্প। তাই এবারের মতো আইন করে কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। এ কারণে বিএনপি রাষ্ট্রপতির অনুসন্ধান কমিটির ওপর ভরসা করছে। কিন্তু তাই বলে আইন প্রণয়নের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, এতে আপাতত সমাধান হলেও একই সমস্যা আবার ফিরে আসবে।

সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, আপাতত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে তিনজন নিয়ে কমিশন গঠন করা হতে পারে। পরে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আরও দুজন কমিশনার নিয়োগ করলে কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে। বর্তমানে একসঙ্গে সব কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কারণে তাঁদের মেয়াদও একসঙ্গে শেষ হয়। এতে করে পরের কমিশনকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি কমিশন গঠনে সংবিধান মেনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। তাদের প্রস্তাবে সম্ভব হলে সংসদের আগামী অধিবেশনে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া আইন প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছে জাসদ, গণফোরাম, ন্যাপ, এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বিএনএফ, তরিকত ফেডারেশন, বিজেপি, বাসদ, বিকল্পধারা, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দলও। ওয়ার্কার্স পার্টি কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেছে।

বঙ্গভবন সূত্র জানায়, ২৩টি দলের সঙ্গে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতি আগামী সপ্তাহে আরও কয়েকটি দলকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, নাকি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ওই সূত্র।

রাষ্ট্রপতির এই সংলাপের উদ্যোগের ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যেটাই করবেন, সেটার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমাদের কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও যদি যায়, তাহলেও আমরা মেনে নেব।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ