শীতে ত্বকের আপনজন
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পেনসিলভানিয়ার ছোট্ট শহর টিটাসভিলে তখন সদ্য পেট্রোলিয়াম জেলি আবিষ্কার করা হয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে আর কী কী করা সম্ভব, এই অনুসন্ধানে সেখানে একদিন হাজির হলেন ২২ বছর বয়সী ব্রিটিশ কেমিস্ট রবার্ট অগাস্টাস চেজবার্গ। তিনি দেখলেন, খনিতে কাজ করা শ্রমিকেরা প্রায়ই আগুনে পুড়ে যাওয়ার কিংবা ড্রিল মেশিনের কাটা-ছেঁড়া সারাতে তেল শোধন প্রক্রিয়ায় উপজাত পণ্য হিসেবে তৈরি হওয়া পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করছেন নির্দ্বিধায়। আর সেসব ক্ষত সেরেও উঠছে দ্রুত। পেট্রোলিয়াম জেলির সেই আশ্চর্য আরোগ্য ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে একদিন তিনি তৈরি করলেন ভ্যাসলিন, যা আজও দিয়ে যাচ্ছে ত্বকের সুস্থতার নিশ্চয়তা।
কালো দাগ আর বলিরেখা?
হলিউডের অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টনকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত বয়সেও কীভাবে তিনি এত সুন্দর ত্বক ধরে রেখেছেন? তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনো সৌন্দর্য ধরে রাখা নিয়ে চিন্তা করি না। রাতে মেকআপ তুলে চোখের চারপাশে একটু ভ্যাসলিন মেখে ঘুমিয়ে পড়ি। এটাই আমার সুন্দর ত্বকের রহস্য।’
ভ্যাসলিনকে অনেকেই চোখের বাহ্যিক ত্বকের যত্ন নেয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মেকআপ রিমুভার হিসেবে ভ্যাসলিন অসাধারণ কাজ করে। তাই চোখের নিচের কালচে ভাব, ভাঁজ আর রুক্ষতা কাটান ভ্যাসলিনে। তুলোয় হালকা করে ভ্যাসলিন মেখে চোখের চারপাশ আলতো করে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আঙুলের সাহায্যে চোখের বাইরের ত্বকে একটু ভ্যাসলিন মেখে ঘুমান। ধীরে ধীরে চোখের চারপাশের ত্বক আর পাপড়ি সুন্দর হয়ে উঠবে। অনেকেই বলেন, ভ্যাসলিন বলিরেখা কমায় এবং চোখের পাপড়ি আরও ঘন আর লম্বা হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
সমস্যা যখন ঠোঁট নিয়ে
শীতে সবচেয়ে নাজেহাল হয় সম্ভবত ঠোঁট। শুধু শুষ্ক হয়ে আসাই যেন যথেষ্ট নয়। ঠোঁটের ত্বকের রং বদলে যায়, কালচে হয়ে ওঠে। এই সময়ে এমন কিছু দরকার, যেটা সবার আগে আপনার ঠোঁটকে স্বস্তি দেবে। নইলে এই রুক্ষতা বেড়ে রক্তপাত হতে পারে, এমনকি ঠোঁটের চারপাশ রূপ নিতে পারে চর্মরোগে। তাই শীতে ঠোঁটের সুরক্ষায় কখনো আপস করতে নেই।
ঠোঁট একটু স্বাভাবিক থাকতেই বিশেষ যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন গোলাপের পাপড়ির প্যাক। কিছু গোলাপের পাপড়ি একটি পুদিনাপাতাসহ প্রথমে একটি চীনামাটির পাত্রে রেখে থেঁতো করে নিন। তাতে মেশান দুই ফোঁটা লেবুর রস আর এক চামচ মধু।
এবার গোলাপজল দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করে নিন। এরপর হালকা চিনি ছড়িয়ে প্যাকটি আঙুল দিয়ে হালকা করে ঠোঁটে এবং চারপাশের ত্বকে ঘষতে থাকুন। পাঁচ মিনিট পরে তুলো দিয়ে মুছে ধুয়ে ফেলুন। এবার ভালোমতো ভ্যাসলিন লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। একরাতেই ভ্যাসলিন আপনার ঠোঁটের রুক্ষতা কাটিয়ে সেই তুলতুলে গোলাপি আভা ফিরিয়ে আনবে। যাঁদের ঠোঁট এরই মধ্যে ফেটে গেছে, তাঁরা ভ্যাসলিন ব্যবহার করে আগে ঠোঁটের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। ফাটা ঠোঁটে কোনো প্যাক ব্যবহার করা উচিত নয়।
হাত–পায়ের সুরক্ষায়
প্রতিদিনের প্রায় সব কাজের ভারই বর্তেছে দুই হাতের ওপরে। হাতও কথা বলে কত। ভালোবাসার স্পর্শ বলুন কিংবা অপরের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্য, হাতের ওপরেই যেন সবকিছু। তাই শীতের রুক্ষতা সরিয়ে হাতকে দিন পেলব ত্বক। যেন স্পর্শেই বোঝা যায় ভালোবাসা। প্রতিদিন ধোয়ামোছা শেষে হাত ধুয়ে ফেলুন কোনো একটি কোমল সাবানে। আর আলতো করে শুকিয়ে নিয়ে মেখে নিন ভ্যাসলিন। নখের চারপাশের শক্ত চামড়া, যাকে আমরা কিউটিকল নামে চিনি, তা শীতে আরও প্রকট হয়ে ওঠে যখন-তখন। ব্যাগে সব সময় ছোট একটি ভ্যাসলিন রাখুন, আর যখনই কিউটিকলের সমস্যায় পড়বেন, ঝটপট একটু ভ্যাসলিন মেখে নিন। সমস্যার মুক্তি মিলবে চোখের পলকে। নখে অনেক দিনের পুরোনো দাগ পড়ে আছে? পুরু করে ভ্যাসলিন মেখে রাখুন নখের ওপরে। মিনিট ১৫ পরে একটি রুক্ষ কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন, দাগ চলে যাবে।
একই কথা প্রযোজ্য পায়ের জন্যও। সারা দিনের ধুলোবালু জমে পায়ে এত সূক্ষ্ম ময়লা জমে, সেটি সরাতে শুধু সাবান বা পানি যথেষ্ট হয় না। তাই ঘরোয়া পেডিকিওর এবং ম্যানিকিওর হতেই পারে প্রতিদিন। একটা বড় বোলে হালকা গরম পানিতে খানিকটা শ্যাম্পু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর একটি ব্রাশের সাহায্যে ঘষে ঘষে নখ ও আঙুল, চারপাশের ত্বক পরিষ্কার করুন। ঠান্ডা পানিতে হাত–পা ধুয়ে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। শুকিয়ে এলে মেখে নিন ভ্যাসলিন। যাঁদের মনে হচ্ছে এটি যথেষ্ট হবে না, তাঁরা পুরু করে হাতে পায়ে ভ্যাসলিন মেখে উলের হাত ও পা–মোজা পরে নিন। রাতারাতি কেটে যাবে রুক্ষতা।
এ ছাড়া প্রতিদিন গোসলের পরে পানি মুছে ভ্যাসলিন মেখে নিতে পারেন পুরো শরীরেই। এটি এমন একটি প্রসাধনী, যা ত্বকের রুক্ষতা কাটায় জাদুর মতো। আর সুস্থতা ধরে রাখে অনেকক্ষণ। তাই তো এই শীতে আপনার ত্বকের প্রিয় বন্ধুর তালিকায় ভ্যাসলিনের নাম চলে আসে সবার আগে। নয় কি? কারণ, এতে আছে ১০০ ভাগ পেট্রোলিয়াম জেলি।
তাই তো ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড তৃণমূলের মানুষের হাতেও পৌঁছে দিচ্ছে ভ্যাসলিনের সুরক্ষা। আর এই কাজে সহযোগিতা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস বা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। এরই মধ্যে টিএমএসএস তাদের নিজস্ব চিকিৎসক আর চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে নিজেদের আঙিনায় পরিচালনা করেছে ৩০০ চিকিৎসক, ৬০০ নার্স এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মশালা। ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মশালায় তাঁরা জেনেছেন ত্বকের সাধারণ সমস্যা আর তার সমাধান। টিএমএসএস আরও পৌঁছে দিয়েছে সচেতনতামূলক লিফলেট, কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে বিতরণ করেছে ব্যবস্থাপত্র আর দরিদ্রতম মানুষটির হাতে পৌঁছে দিয়েছে ভ্যাসলিনের ফ্রি স্যাম্পল। এভাবেই ভ্যাসলিন তার সুরক্ষা–বলয়ে নিশ্চিত করে চলেছে এ দেশের দরিদ্রতম মানুষটিরও ত্বকের সুস্বাস্থ্য।