দেওয়ানি কার্যবিধি কাজের অনুপযোগী: প্রধান বিচারপতি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সনাতন মামলা ব্যবস্থাপনার কার্যপ্রণালী ধরে রাখা, সেকেলে অফিস প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত জনবল ও বিচারক স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে মামলা জটের নিয়ামক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি কাজের অনুপযোগী ও প্রয়োগ পদ্ধতিও সেকেলে। একটি জুডিশিয়াল পলিসি তৈরি ছাড়া মামলাজট সামলানো দুরূহ।
আজ শনিবার অধস্তন আদালতে মামলা ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জুডিশিয়াল পলিসি প্রণয়ন বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য দুই দিনের ওই কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা (ইউএসএইড)।
বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ বিভিন্ন কারণে মামলাজট তৈরি হয় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, প্রাচীন প্রশাসনিক প্রক্রিয়া; ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা, জটিল কার্যপ্রণালী, চল নেই এমন ফাইলিং পদ্ধতি ও বিচারপ্রার্থীসহ পক্ষগুলোকে নোটিশ দেওয়ার কার্যপ্রণালির অপর্যাপ্ততা বিচার প্রশাসন অগ্রগতিতে সহায়ক নয়। এ ক্ষেত্রে আদালতের কার্যপ্রণালির অপব্যবহার, মামলার শাখা-বিন্যাস ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে দক্ষতার অভাবের কথাও বলেন তিনি।
বিচারপদ্ধতি দক্ষ, দ্রুত ও বিচারপ্রার্থী বান্ধব করতে একটি জুডিশিয়াল পলিসি প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনা করছেন জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ জন্য দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মানসিকতাও বিবেচনায় নিতে হবে।
দেশের দক্ষ বিচার বিভাগ রয়েছে, যা মামলা জটের মতো সমস্যা নিরসন করার সক্ষমতা এবং দক্ষ মামলা ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রবর্তন করতে পারে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মূলত বিচার পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতা বাড়াতে সমর্থন প্রয়োজন। দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে মামলাজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
মামলাজটের বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি কাজের অনুপযোগী ও প্রয়োগ পদ্ধতি সেকেলে। বিচারক স্বল্পতা ও শূন্য পদ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, নিয়োগের প্রাথমিক প্রস্তাব আসে মন্ত্রণালয় থেকে। কিছু আগে একটি স্টেশন (আদালত) পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, নয়জন বিচারিক হাকিমের মধ্যে সেখানে আছেন দুজন। সামনে বেশ কয়েকজন জেলা জজ অবসরে যাবেন। শূন্য পদ পূরণে চার-পাঁচ মাস সময় লেগে যায়। অথচ এ সময়ে মামলা হচ্ছে ও স্তূপ তৈরি হচ্ছে। এটি অন্যতম সমস্যা। অধস্তন আদালতে কোনো পদ খালি হলে তা দ্রুত পূরণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিচারিক কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও জ্ঞান একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সমন্বিত জুডিশিয়াল পলিসি প্রণয়নে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর আশা, এই জুডিশিয়াল পলিসিতে মামলা নিষ্পত্তির কর্মপন্থা, প্রশাসনিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি, অবকাঠামো ব্যবস্থার উন্নয়ন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতসহ অন্যান্য জরুরি ইস্যুগুলো থাকবে। জুডিশিয়াল পলিসি হলেও আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ছাড়া তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। এ কাজে অংশীজনদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে জুডিশিয়াল পলিসি হয়েছে। এ দেশেও এ ধরনের পলিসি জরুরি। এ কারণেই এই কর্মশালার আয়োজন।
স্পেশাল অফিসার হোসনে আরা আকতারের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউএসএইডের ডেপুটি চিফ অব পার্টি শারমিন ফারুক। দুই দিনের কর্মশালায় বিচারক ও বিচারবিভাগীয় ৪০ জন কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন বলে জানান আয়োজকেরা।