প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ না করলে পিছিয়ে পড়বে গণমাধ্যম
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এখনকার গণমাধ্যমের গন্তব্য ডিজিটালের দিকে। অনেক পাঠকই এখন খবরের জন্য স্মার্টফোনের ওপর নির্ভর করেন। কাজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করতে অনেক গণমাধ্যমকর্মীই হিমশিম খান। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে গণমাধ্যমগুলোকে। না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।
এমন পর্যবেক্ষণ ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (ইনমা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর্ল জে উইলকিনসন।
আজ রোববার দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ে এক আলোচনায় বিশ্ব গণমাধ্যমের গতি-প্রকৃতি, এখনকার অবস্থা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন উইলকিনসন। আলোচনার আয়োজক নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। বিশ্বের ৬৩টি দেশে ৬১৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার ৬৯৩ সদস্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসভিত্তিক সংস্থা ইনমার। আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা (এবিপি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডি ডি পুরকায়স্থ। ডি ডি পুরকায়স্থ ইনমা এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপার্স অ্যান্ড নিউজ পাবলিশার্সের (ওয়ান-ইফরা) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
উইলকিনসন বলেন, আমেরিকার নির্বাচন শেষে গণমাধ্যমগুলোর অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কারণ, তারা তৃণমূল মানুষের মনের ভাষা পড়তে পারেনি। মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ অবস্থায় সংবাদ সংস্থা হিসেবে পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর দায়িত্ব সত্যের মূল্যায়ন ও বিশ্বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে উতরে যাওয়ার চেষ্টা করা।
ইনমার প্রধান নির্বাহী মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সংবাদ অনেকটাই পণ্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ফেসবুকের মতো সাইটগুলো গণমাধ্যম নয়। সেখানে সবাই কনটেন্ট দেন, সবাই নিজেকে রিপোর্টার কিংবা সম্পাদক মনে করেন। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা। এর কোনো বিকল্প নেই।
ইনমার প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, সারা পৃথিবীর সংবাদপত্র যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ইনমার সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে সে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগান। ইনমার পক্ষ থেকেও নানা ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ নানা বিষয়ে সহায়তা করা হয়। এ ধরনের অভিজ্ঞতার বিনিময়ের মাধ্যমে সংবাদপত্র এগিয়ে যাওয়ার নিত্যনতুন পথ খুঁজে পায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডি ডি পুরকায়স্থ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সংযুক্তি এবং সংবাদমাধ্যমের অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি জানান, সেখানকার ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোতে পাঠকসংখ্যা কমছে। শহুরে তরুণদের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে তাঁরা সংবাদপত্রের চেয়ে ইন্টারনেটেই খবর পড়তে ভালোবাসেন। ভারতীয় বাংলা সংবাদপত্রগুলোও তিন বছর ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। পাঠকসংখ্যা সেভাবে বাড়ছে না।
আনন্দবাজার পত্রিকার নীতিমালায় এখন পাঠকের পছন্দ ও চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ডি ডি পুরকায়স্থ বলেন, পাঠক যা চান, তা-ই দিচ্ছি আমরা। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ডিজিটাল বিভাগ চালুর কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াবের সহসভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।
আলোচনায় অংশ নেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দীন আহমদ, ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, ইত্তেফাক পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিষ সৈকত প্রমুখ।