ডব্লিওইএফ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল বলেছেন, আগামী ১৭ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিওইএফ)-এর ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের ফলে এ সম্মেলনটি বিশ্বের শীর্ষ বহুজাতিক কোম্পানী, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিওইএফ-এর সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য চারদিনের সফরে আজ রাতে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিওইএফ)-এর ৪৭তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের ডাভোস সফর নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ডব্লিওইএফ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়ান-এর বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। প্রফেসর ক্লাউস গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ বছরের সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। ডাভোস সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে তিনি এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ রয়েছেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ডব্লিওইএফ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা যা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্ববাণিজ্য বৃদ্ধি ও প্রসারে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে থাকে। সমসাময়িক বিশ্ব-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিরূপণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি, নিয়ামক ও করণীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী ধারণা, পন্থা এবং সমাধানের উপায় ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করা সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে নীতি-নির্ধারক, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য, শ্রম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ সমাজের সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমূহ অর্জনে ডব্লিওইএফ বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
তিনি বলেন, প্রতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডব্লিওইএফ-এর বার্ষিক সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন।
এবারের সভায় সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, শ্রীলংকা, পেরু, জর্ডান, মিশর ও কাতারসহ বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান এবং ডব্লিও, ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, ইউএনসিটিএডি, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, বিভিন্ন সংস্থাপ্রধানগসহ প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘের নব নির্বাচিত মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসও এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং ক্রমপরিবর্তনশীলমেরুকরণের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের পার¯পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির বিষয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রস্তাবনার আলোকে এবারের সম্মেলনটি এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরো বলেন, এ বৎসর ডব্লিওইএফ-সভার প্রতিপাদ্য ‘রেসপন্সিভ এন্ড রেসপন্সিবল লিডারশিপ’। বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অগ্রগতি ও করণীয় সম্পর্কে এ সভায় আলোচনা হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তি ও ক্ষেত্রসমূহ এ সভার মধ্য দিয়ে আরো মজবুত ও প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, এবারের বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রী পানি অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, তথ্য প্রযুক্তি এবং নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্লেনারি ও প্যানেল সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
এ সকল প্যানেল আলোচনা ও সেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরিশাসের রাষ্ট্রপতিদ্বয়, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও পেরুর প্রধানমন্ত্রীবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সমসাময়িক বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে “শ্যাপিং এ নিউ ওয়াটার ইকনোমি’’ শীর্ষক এক কর্মশালায়ও যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা বিকেলে কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ায় হার্মসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম ডব্লিওইএফ বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত সরকার প্রধানকে এই সম্মানজনক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে এই আমন্ত্রণ একদিকে যেমন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকা ও অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব যে আজ তাঁকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য আসনে বসিয়েছে তারও ইঙ্গিত বহন করে।
মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জন, সাফল্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে, বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ডব্লিওইএফ বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ কাক্সিক্ষত ফল বয়ে আনবে বলে আমরা আশা করছি। এর ফলে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উদার, গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আরো একবার তুলে ধরার সুযোগ তৈরী হবে। প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের ফলে এ সম্মেলনটি বিশ্বের শীর্ষ
তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানী, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। ফলে সার্বিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন এ সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশা করছি।
পাঁচদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ২০ জানুয়ারি দুপুর ২টা ৩৫মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং ২১ জানুয়ারি দুবাই হয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন।