ভালো উৎপাদন পেতে শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পোশাক কারখানার ভবন, অগ্নিনির্বাপণ সুবিধা, নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। ভালো উৎপাদন পেতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা পোশাক শিল্পের দায়িত্ব।

আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলো আয়োজিত ‘পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ: প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের কথায় এ বিষয়টি উঠে আসে। এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, পোশাক কারখানায় লাখ লাখ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব কে করবে? শ্রমিক অধিকারের পক্ষে কথা বলতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী পোশাক কারখানায় সুস্থধারার দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ৮০ শতাংশ নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও প্রজনন সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।

নেপালের উদাহরণ দিয়ে শিরিন আখতার বলেন, নেপালে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীদের মাসিক চলাকালে দুই দিন ছুটি নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কোনো আইন নেই। নেপালের মতো না হলেও কারখানায় নারীদের স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে তিনি প্রস্তাব তুলবেন বলেও জানান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার বলেন, ২০১৮ সালে মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে। সে সময় আলোচনা করে ছয় মাস সময় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হবে। এ কারণে ২০১৯ সালের আগে নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হবে না।

শ্রম সচিব বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ২ হাজার ২৩১টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ১৫০টি কারখানা প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও মান নিশ্চিত না করায় বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কারখানাগুলো যাতে জেন্ডার সমতার বিধানগুলো মেনে চলে এ জন্য জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও বিজিএমইএর সঙ্গে এক হয়ে সরকার কাজ করছে।

বৈঠকে পোশাকশ্রমিক তাসলিমা বেগম বলেন, কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকেরা তাদের মাসিক নিয়ে কোনো সমস্যা হলে পুরুষ সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলতে সংকোচবোধ করেন। কারখানাগুলোতে বেশি নারী সুপারভাইজার দরকার বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত তিন বছরে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে অকল্পনীয় পরিবর্তন এসেছে। এ খাতে নিযুক্ত ৪৪ লাখ পরিবারকে আমরা লালন-পালন করছি।’ তিনি বলেন, যেসব কারখানা বিজিএমইএ বা নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন, বিকেএমইএর সদস্য নয়, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পোশাক শিল্প খাতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের চিত্র দেশের সার্বিক চিত্র থেকে ব্যতিক্রম নয়। এ খাতে কাজ করা নারীদের বেশির ভাগই ১৮-৩৫ বছরের প্রজননক্ষম। কাজে নিযুক্ত হওয়ার পর তাদের গড় বিয়ের বয়স ও অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যসেবা অর্থাৎ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পোশাক শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু তা এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিক সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে শ্রমিকদের কল্যাণে একটি টেকসই ব্যবস্থার উদ্ভাবনে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সামছুজ্জামান ভূইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রকল্পের পরিচালক আবুল হোসেন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের এসআরএইচআর অ্যান্ড জেন্ডারবিষয়ক উপদেষ্টা মাশফিকা জামান, জ্যেষ্ঠ এসআরএইচআর বিশেষজ্ঞ খালেদ আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রেনারের সহসভাপতি রুবিনা হোসেন, ওয়ার্কিং উইথ উইমেন—আরএমজি প্রজেক্টের টিম লিডার ফারহা দীবা রাহাত খান, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহিম হাসান, মোহাম্মদী গ্রুপের কমপ্লায়েন্স বিভাগের এজিএম সৈয়দ এহতেশাম কবীর, একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি খাদিজা আক্তার।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ