জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কখনই জ্বরে ভোগেনি এমন লোক পাওয়া মুশকিল। তবে জ্বর কোনো অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ মাত্র। আবার গা গরম হওয়া মানেই কিন্তু জ্বর নয়। সংজ্ঞানুসারে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মানদণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়ে যদি শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ থেকে ১০০ ফারেনহাইট বেড়ে যায় তবেই জ্বর বলে ধরে নেওয়া হয়।

একজন সুস্থ নারী বা পুরুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা
• মুখে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯২-১০০ ফারেনহাইট
• রেক্টাম বা পায়ুপথে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯৪-১০০ ফারেনহাইট
• হাতের নিচে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯৬-৯৯ ফারেনহাইট

বিভিন্ন ধরনের জ্বর:
জ্বরের বিভিন্ন ধরণের মধ্যে- চলমান জ্বর, নির্দিষ্ট বিরতির পর জ্বর, রেমিটেন্ট ফিভার,পল অ্যাবস্টেন ফিভার,প্যারাসিসট্যান্ট ফিভার বা ক্রমাগত জ্বর এবং অতিরিক্ত জ্বর অন্যতম।

জ্বরের কারণ:
ইনফেকশনের কারণে , টিস্যু ক্ষতিগ্রস্থ হলে, রক্ত দেওয়ার পর যদি দাতা ও গ্রহীতার রক্তের ক্রস ম্যাচিং বা সঠিক সমন্বয় না হয়, ক্যান্সার হলে, পালমোনারি এমবোলিজম হলে, ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস হলে এবং কখনো কিছু মেটাবোলিক অসুস’তায় গাউট হলে জ্বর হতে পারে। জ্বর কখনো একা আসে না। এটি সঙ্গে আনে কাশি, গলা ব্যথা, দুর্বলতা, গা ব্যথা, কাঁপুনি, বমি ভাব ও খাবারে অরুচি ইত্যাদি।

জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক?
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়, রোগীরাও জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা খেতে শুরু করেন। কিন্তু অধিকাংশ জ্বরের ক্ষেত্রেই এর কার্যকারিতা নেই, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ক্ষতির কারণও হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেসব ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে বা বিস্তার রোধ করে। এটি জ্বর কমায় না। জ্বর ভাইরাসঘটিত হলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই, কাজও নেই। আবার শ্বাসনালির সমস্যা যেমন- ফ্লু, সর্দিজ্বর, গলাব্যথা ইত্যাদি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাঘগটিত। আর তা ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়।

কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিসে পৌঁছার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিলে প্রকৃত রোগটি অনেক সময় ধরে পড়ে না। এতে সুচিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

জ্বর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবায়োটিক দিলে বাচ্চাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সুযোগও হয় না। তাই অন্তত ২ দিন না গেলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়। মনে রাখবেন, মেনিনজাইটিস ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে দেরি করে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে কোনো অসুবিধা নেই।

জ্বরের সঙ্গে পেট খারাপ থাকলে যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে ইনফেকশন আরও বেড়ে যাবে। কখনো যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগী মারাত্মক অন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

কোনো কারণ ছাড়াই ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীরে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়। তাই আন্দাজে অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে দিতে হবে।

দামি অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই দ্রুত রোগ সারবে- একথা ঠিক নয়। কিন্তু হাতুড়ে ডাক্তাররা এ সুযোগে প্রচুর দামি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন, বেশির ভাগ জ্বরে যদি অ্যান্টিবায়োটিক লাগে তা কম দামের পেনিসিলিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকই যথেষ্ট।

কখন অ্যান্টিবায়োটিক খেতেই হয়?
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রমে আক্রান্ত।
যারা ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট (যেমন- ক্যান্সারের ওষুধ, কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার পর যে ধরনের ওষুধ খেতে হয়) ওষুধ খান।
কেমোথেরাপি নিলে।
যাদের কোনো কারণে প্লীহা ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বাতজ্বরের রোগী এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
জ্বর যদি যক্ষ্মা বা টিবির কারণে হয় মনে রাখবেন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে দু-এক দিনের মধ্যে অনেক সময়ই জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু জ্বর চলে গেলেই ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় এটাও বিপদের কারণ হতে পারে।

জ্বর বেশি মানেই রোগ বেশি, আর কম মানেই গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই এটা ঠিক নয়। কারণ অনেক সময় সাধারণ অসুখেও অনেক জ্বর থাকে, আবার কোনো কোনো সময় মারাত্মক অসুখেও হালকা জ্বর থাকে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ