সড়ক কেটে তার ওপর চলছে উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কোথাও কাদাপানি, কোথাও ধুলা, কোথাও ভাঙা সড়ক, কোথাও সংকীর্ণ সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট। এই চিত্র মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের বিভিন্ন স্থানে। ওই এলাকার পথচারী ও বাসিন্দারা বলছেন, তাঁরা উড়ালসড়কের নিচের নানা সমস্যার কারণে অতিষ্ঠ।
উড়ালসড়কটির কাজ চলছে শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ, মগবাজার থেকে রাজারবাগ এবং রাজারবাগ থেকে মৌচাক ও মৌচাক থেকে রামপুরার কিছু এলাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ওয়ারলেস থেকে মৌচাক আরেকটি রুটের নির্মাণকাজ চলছে; যা রাজারবাগে এসে যুক্ত হবে।
মালিবাগ থেকে রামপুরার দিকে যাওয়ার পথে গিয়ে দেখা গেছে, ওই সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সড়ক কেটে তার ওপর চলছে উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ। এতে সড়কের ওপর বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সরু হয়ে আসা সড়কের ওপর যানবাহন চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। সড়ক ক্ষীণ হয়ে আসায় যানবাহন ফুটপাতে উঠে গেছে। পথচারীদের হাঁটার পথও নেই।
অবশ্য এই দুর্ভোগ শিগগিরই শেষ হবে বলে জানায় নির্মাণ কর্তৃপক্ষ। উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের প্রজেক্ট ম্যানেজার তুহিন বিন আজাদ বলেন, তিন বছর আগে এই উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুনে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।
ওই সড়কে প্রচেষ্টা পরিবহনের চালক মনির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর বাস মাওয়া থেকে আবদুল্লাহপুর সড়কপথে চলে। যাওয়া-আসার পথে মালিবাগ হয়ে রামপুরার ওপর দিয়ে চলতে হয়। এখানে উড়ালসড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সড়কে যানজট লেগেই আছে। আগে যেখানে তিনি কয়েকবার যাওয়া-আসা করতে পারতেন, এখন মাত্র একবার যাওয়া-আসা করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইসা থাকতে হয়। দুই ঘণ্টা কখনো তিন ঘণ্টাও এইখানে বইসা থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় গাড়ি চলা ছাইড়া দেই।’
রিকশাচালক হাতেম আলী বলেন, ‘২৫ বছর ধইরা রিকশা চালাই। এত জাম জীবনেও দেখি নাই।’ রাস্তা খারাপের কারণে যাত্রী রিকশায় উঠতে চান না বলে জানান তিনি।
উড়ালসড়ক নির্মাণের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের সময় ধুলা উড়তে থাকে। অনেকেই নাক চেপে পথ চলেন।
রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন হকার মিরাজুল ইসলাম। তিনি মাস্ক পরে পথ চলছিলেন। শান্তিনগর মোড়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই রাস্তায় ১০ বছরে ধরে হকারি করেন। কিন্তু উড়ালসড়কের কাজ চালু হওয়ার পর থেকে তাঁকে মাস্ক পরতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া চলতে পারি না। না পরলে কাশি হয়, কফ হয়।’
মগবাজার এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী সামিউল ইসলামের ভাষ্য, ‘আমি প্রতিদিনই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এই পরিস্থিতিতে রাস্তা দিয়ে যেতে আমার ক্লাস শেষ হয়ে যায়। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়।’
মৌচাক মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেল, সুয়ারেজের লাইন ছিদ্র হয়ে রাস্তায় কাদাপানি জমেছে। পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। তাই সেখানে এই শীতের মৌসুমেও অনেক পানি জমে আছে। মানুষ সেই কাদাপানি মাড়িয়ে চলাফেরা করছেন। ভোগান্তির কথা জানতে চাইতেই পথচারী আবদুল মোমেন বলেন, ‘এটা কোনো সভ্য মানুষের দেশ হতে পারে? আমরা কি এই এলাকার মানুষ না নাকি? প্রতিদিন কাদাপানিতে চলাচল করতে প্রায়ই আমার কাপড় ভিজে যায়। ময়লা পানিতে পা চুলকায়। এক অস্বস্তি নিয়ে পথ চলতে হয়।’ তিনি প্রশ্ন করেন, বছরের পর বছর কি এভাবেই চলতে থাকবে?
পশ্চিম মালিবাগের বাসিন্দা মাহফুজুল ইসলামকেও দেখা গেল বাসা থেকে বেরিয়ে আসার পর মাস্ক পরছিলেন। দুর্ভোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেল, ‘আমাদের বাসায় সবাই মাস্ক পরে বাইরে বের হই। বাসা সামনের রাস্তায় পথ চলার জায়গাও নেই। রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। কোথাও গেলে যদি বাসে উঠি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গাড়ি চলে না।’