তিন ‘স’-এর ব্যাটিংয়েও ৩০০ হলো না
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: একজনের এর আগে ছিল মাত্র তিন টেস্টের অভিজ্ঞতা। আর দুজন টেস্টই খেলেননি। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ দলে এই তিনজনই নতুন সংযোজন। হতাশ করেননি তাঁরা। সৌম্য সরকারের টেস্ট সর্বোচ্চ ৮৬ রানের পর নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল হোসেনের ৫৩ রানের জুটির সৌজন্যে প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ২৮৯ রান। অভিজ্ঞদের মধ্যে সামনে থেকে পথ দেখাচ্ছিলেন সাকিব। সাকিব, সৌম্য আর সোহান—তিন ‘স’-এর ব্যাটিংয়েও তবু ৩০০ হলো না বাংলাদেশের।
ওয়েলিংটন টেস্টের দুঃস্বপ্ন কি ভুলতে শুরু করল বাংলাদেশ! ক্রাইস্টচার্চে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও যথারীতি বাতাসের দাপট ছিল। হাত-পা জমিয়ে ফেলা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া তাপমাত্রা নামিয়ে এনেছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ রকম কন্ডিশনের কথা ভেবেই হয়তো টসে জিতে আগে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
উইকেটে কিছুটা মুভমেন্ট ছিল। সে জন্য শুরু থেকেই শর্ট বল বা বাউন্সারের অস্ত্র বের করলেন না কিউই ফাস্ট বোলাররা। আগে প্রকৃতির দানটাই নিতে চাইলেন। তবে মাঝে মাঝে দু একটা বলে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষাটা ঠিকই নিয়ে নিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের বেশির ভাগ উইকেটই গেছে আচমকা পাঁজরের কাছে লাফিয়ে ওঠা সেসব বলে।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওরকমই এক বলে গ্লাভস ছুঁইয়ে টিম সাউদির প্রথম শিকার তামিম ইকবাল। ব্যাপক অদল-বদলের দলে তিন নম্বরে উঠে এসেও হারানো ফর্মের দেখা পাননি মাহমুদউল্লাহ। সাকিবের ৫৯ রানের ইনিংসও শেষ হয়েছে তামিমের মতোই বুক উচ্চতায় উঠে আসা সাউদির একটা বলকে অন সাইডে ঠেলতে গিয়ে।
প্রথম দিনে বাংলাদেশের ইনিংসে আলোটা বেশি পড়ছে তৃতীয় উইকেটে সাকিব-সৌম্যর ১২৭ রানের জুটির ওপর। ইমরুলের বদলে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হয়ে তামিমের কথা মতোই খেললেন সৌম্য। কাল সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেছিলেন, টেস্ট বলে কুঁকড়ে থাকবেন না সৌম্য। নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে হবে। হ্যাগলি ওভালে অধিনায়কের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললেন সৌম্য।
১০৪ বলে ১১ বাউন্ডারিসহ ৮৬, নিজের প্রথম টেস্ট ফিফটির ইনিংসের প্রতিটা শটেই সৌম্য জানান দিচ্ছিলেন হারানো ফর্ম অবশেষে ফিরে এসেছে। বাজে বল পেলে সাউদি, গ্র্যান্ডহোমের এক ওভারে যেমন দুই করে বাউন্ডারি মেরেছেন, জায়গামতো বাউন্সার পেলে পুল করেছেন, কখনো বাউন্সারের সামনে থেকে নিজেকে সরিয়েও নিয়েছেন সময় মতো। তবু দুর্ভাগ্য সৌম্যের। ব্যক্তিগত ৫২ রানে গ্র্যান্ডহোমের বলে ফিরে পাওয়া জীবনকে রূপ দিতে পারেননি সেঞ্চুরিতে।
৩৮ রানে ২ উইকেট পড়ার পর সৌম্য-সাকিবের জুটিতেই পথ দেখছিল বাংলাদেশ। ওই দুই উইকেটেই ১২৮ করে লাঞ্চ। কিন্তু সৌম্যের আউটের পর আবারও যেন পথহারা ইনিংস। ১৭ বলের ব্যবধানে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন সৌম্য, সাব্বির আর সাকিব। প্রথম দিনের আসল চমকটা এরপরই। চা বিরতি পর্যন্ত ওই পাঁচ উইকেটেই বাংলাদেশের রান ২২৫।
অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা নুরুল হাসান ও নাজমুল হোসেন ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন ৫৩ রানের জুটি। কিউই পেসারদের সামনে টেস্টের প্রথম ইনিংসে তরুণ নাজমুলের ৫৬ বল খেলে যাওয়াটা বড় আশার খবর। আরেক নতুন মুখ নুরুল হাসান তো অভিষেক টেস্টে ফিফটিই করে ফেলছিলেন। পারলেন না বোল্টের পর পর দুই বাউন্সারের ফাঁদে পড়ে। ৪৩ রান থেকে বোল্টকে অন ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে ৪৭-এ পৌঁছে গিয়েছিলেন। পরের বলেই বোল্ট দিলেন বাউন্সার। ডাক করে সেটা সামলালেও ওভারের তৃতীয় বলে পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপার ওয়াটলিংয়ের হাতে।
চা বিরতির আগেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের সারা দিন ব্যাটিং করায় কামরুল ইসলামের ভূমিকাটাও ভুলে গেলে চলবে না। মূলত বোলার হলেও টেস্টের সত্যিকারের ব্যাটিংটাও বোধ হয় ভালোই জানা তাঁর। দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেছেন ৬৩ বল। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন সাউদির পঞ্চম শিকারে পরিণত হয়ে। কামরুলকে এলবিডব্লু করে টেস্টে ষষ্ঠবারের মতো ৫ উইকেট পেলেন সাউদি। শেষ ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেনের কথাই বাদ থাকবে কেন! যেভাবে বাউন্ডারি হাঁকাতে শুরু করেছিলেন তাতে একপর্যায়ে বাংলাদেশের রানটা তিন শ হবে বলেই মনে হচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত সেটা না হলেও হ্যাগলি ওভালে টেস্টের শুরুর দিনটা খারাপ কাটেনি বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় কথা চোটাঘাত ছাড়াই শেষ হয়েছে দিনটা। বোল্টের বল ব্যাট ছুঁয়ে রুবেলের হাতে আঘাত করলে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হলেও ইনিংস শেষ করেই মাঠ ছেড়েছেন রুবেল।
চার উইকেট বোল্টের। অন্যটি নিয়েছেন ওয়াগনার। স্পিনার স্যান্টনারকে আসতেই হয়নি আক্রমণে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৮৪.৩ ওভারে ২৮৯/১০ (তামিম ৫, সৌম্য ৮৬, মাহমুদউল্লাহ ১৯, সাকিব ৫৯, সাব্বির ৭, নাজমুল ১৮, নুরুল ৪৭, মিরাজ ১০, তাসকিন ৮, কামরুল ২, রুবেল ১৬*; বোল্ট ৪/৮৭, সাউদি ৫/৯৪, ওয়াগনার ১/৪৪)।
* প্রথম দিন শেষে