টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের অংশীদারত্বের চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিজের দেশকে প্রত্যাহার করে নেন।
ট্রাম্পের মতে, টিপিপি চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ‘কর্মসংস্থান হত্যাকারী’ এবং ‘স্বার্থের ধর্ষণকারী’। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়া ছিল অন্যতম। এ ছাড়া তিনি উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (নাফটা) থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেই কথা বলছি। আমরা যা করেছি, তা মার্কিন কর্মীদের জন্য অনেক বড় কিছু।’
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সময় ২০১৫ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় ১২টি দেশের মধ্যে টিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষর করা দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ এই দেশগুলোর দখলে। তবে ওই চুক্তি এখনো কার্যকর হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসও চুক্তি অনুসমর্থন করেনি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় চুক্তিটি অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বিকল্প সত্য’
ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও সাবেক ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কেলি অ্যান কনওয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকসংখ্যা নিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার যে কথা বলেছেন, তা মিথ্যা নয়, বিকল্প সত্যমাত্র।
অধিকাংশ পত্রপত্রিকা ও টিভি নেটওয়ার্কের হিসাব অনুসারে শুক্রবারের অভিষেকে দুই লাখের মতো দর্শক উপস্থিত ছিল, অন্যদিকে বারাক ওবামার ২০০৯ সালের অভিষেকে উপস্থিত দর্শকসংখ্যা ছিল ১৮ লাখ। এই খবরে রুষ্ট হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএনসহ বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমে দুই অভিষেকে উপস্থিত দর্শকের ছবি পাশাপাশি দেখানো হয়, তাতে বিশেষভাবে ক্রুদ্ধ তিনি। শনিবার সিআইএ সদর দপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতে ট্রাম্প নিজে দাবি করেন, ১০-১৫ লাখ লোক তাঁর অভিষেকে এসেছিল। তিনি দাবি করেন, তথ্যমাধ্যমের খবর মিথ্যা, তাদের তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন। সাংবাদিকদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘এরা হলো বিশ্বের সবচেয়ে অসৎ মানুষ।’ তাতেও খুশি না হয়ে সেদিনই ট্রাম্পের নির্দেশে হোয়াইট হাউস ব্রিফিং রুমে উপস্থিত হন শন স্পাইসার। সেখানে ট্রাম্পের মুখপাত্র দাবি করেন, ট্রাম্পের অভিষেকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দর্শকের সমাগম হয়েছিল। মাত্র পাঁচ মিনিটের সে ব্রিফিংয়ে স্পাইসার কোনো প্রশ্ন নিতে অস্বীকার করে দ্রুত সরে পড়েন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর হিসাবে, সেই পাঁচ মিনিটে স্পাইসার পাঁচটি ডাহা মিথ্যা কথা বলেন।
কথাটা মিথ্যা ও সহজেই প্রমাণযোগ্য, তারপরও ট্রাম্প কেন তাঁর মুখপাত্রকে সে কথা বলতে পাঠালেন? রোববার এনবিসি টিভির রবিবাসরীয় অনুষ্ঠান ‘মিট দ্য প্রেস’-এর উপস্থাপক চাকটড এ কথা সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কনওয়েকে। এত সামান্য একটা ব্যাপার, তা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রথম ব্রিফিংয়ে এমন মিথ্যাচার কেন করতে হলো? জবাবে কনওয়ে বলেন, মিথ্যা নয়, স্পাইসার ‘বিকল্প সত্য’ (তাঁর ভাষায় ‘অলটারনেটিভ ফ্যাক্ট’) প্রকাশ করেছেন মাত্র। তাঁর সে কথায় বিস্মিত হয়ে চাকটড মন্তব্য করেন, বিকল্প সত্য বলে কিছু নেই, যা আছে তা হলো নির্জলা মিথ্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক মাধ্যমে এখন এই ‘বিকল্প সত্য’ নিয়ে লেখালেখির হিড়িক পড়েছে। বিকল্প সত্য আবিষ্কারের জন্য কনওয়েকে কৃতিত্ব দেওয়া হলেও ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েল তাঁর কল্পকাহিনি ১৯৮৪-তে সে কথা আগেই বলে গেছেন।
সত্য ঘটনাকে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাকে সত্য বলার ট্রাম্প প্রশাসনের এই চেষ্টায় বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক ভাষ্যকার উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, ট্রাম্পের ‘বিকল্প সত্য’ মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য এক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য অ্যাডাম শিফের উদ্ধৃতি দিয়ে পলিটিকো লিখেছে, ট্রাম্প ইরান বা উত্তর কোরিয়া বিষয়ে মিথ্যা দাবি করে বলতে বলেন যে দেশ দুটি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করতে যাচ্ছে, এমন দাবির প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
ট্রাম্পের জামানায় ক্রমে সত্যের স্থান দখল করে নিচ্ছে মিথ্যা। অরওয়েল ১৯৮৪ গ্রন্থে যে কাল্পনিক রাষ্ট্রের চালচিত্র এঁকেছিলেন, দেখা যাচ্ছে কিছুটা বিলম্বে হলেও তাঁর চিত্রিত ছবি বাস্তবের চেয়ে খুব ভিন্ন নয়।