স্বার্থের দ্বন্দ্ব: তবু তারা কমিটিতে
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি উপেক্ষা করে প্রত্যক্ষ, আর্থিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে এমন সংসদ সদস্য রয়েছেন সংসদীয় বিভিন্ন কমিটিতে।
গণমাধ্যমে একাধিকবার আলোচনার পর কয়েকজন সংসদ সদস্যকে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে বাদ দেয়া হলেও বিধান লঙ্ঘন করে কমিটিতে কয়েকজন রয়েছেন এখনো।
তবে এসব সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন যে স্বার্থের সংঘাত ঘটাচ্ছে, সেই বিষয়ে তথ্য না থাকার দাবি করেছেন সংসদের প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ।
সংসদ নেতার অনুমতি নিয়ে প্রধান হুইপ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
আব্দুস শহীদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সংসদীয় কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে কার্যপ্রণালী বিধিতে স্পষ্ট বিধান আছে।
“তবে কোন সদস্য কী ব্যবসা করেন, সেটা সঠিক তথ্য থাকাটাও জরুরি। তথ্য থাকলে অবশ্যই এ ব্যাপারে মাননীয় সংসদ নেতার পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, “এমন কোনো সদস্য কমিটিতে নিযুক্ত হইবেন না, যাহার ব্যক্তিগত, আর্থিক ও প্রত্যক্ষ স্বার্থ কমিটিতে বিবেচিত হইতে পারে, এমন বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্টতা আছে।”
সংসদ সদস্যদের এই বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “যারা বিধি তৈরি করেন, তারাই যদি না মানেন, তবে কারো কিছু করার থাকে না।
“মেনে না চললে ওই বিধি প্রণয়নই নিরর্থক।”
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী। সরকারি দলের এই হুইপ নৌপরিবহন খাতের একজন ব্যবসায়ী। হারবার সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের লঞ্চসহ নদীপথে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলকারী আরো পরিবহন আছে।
জানতে চাইলে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “আমি প্রথম যখন ১৯৯১ সালে নির্বাচন করি তখনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করি।
“আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নেভিগেশন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেখানে আমার কিছু করার নেই। পরিবারের সদস্যরা ব্যবসা করতেই পারেন। বেশকিছু ব্যবসা আমার ভাই এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে।”
যমুনা ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার পরেও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বহাল আছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম ও গোলাম দস্তগীর গাজী। একই কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল; যার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিএমসি কামাল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে ঠিকাদারির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমানকে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে আলোচনার পর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি এই পদ থেকে সরানো হয় তাকে।
২০১১ সালের ২২ মার্চ একইভাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ থেকে সরানো হয় আবাসন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নসরুল হামিদ বিপু ও এনামুল হককে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেমের পরিবার জাহাজ ভাঙা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসলাম বলেন, “স্যার অসুস্থ।”
একই কমিটির সদস্য টিপু মুনশী সেপাল গার্মেন্টস কারখানার মালিক। গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক এই সভাপতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিরও সদস্য।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সদস্য আরেক সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আফিল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং আকিজ গ্রুপের পরিচালক।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বজলুল হক রাজবীথি ট্রাভেলসের কর্ণধার। এ প্রতিষ্ঠানটি হজ ও ওমরার জন্য বাণিজ্যিকভাবে সৌদি আরবে লোক পাঠায়। বজলুল হক ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বজলুল হকের দুটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বে-ইস্টার্নের কর্ণধার, যে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে শ্রমিক পাঠায়।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানি খাত ও বস্ত্র খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী। যিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য।