সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী ও সৎ থাকতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড জনগণকে জানানোর আহ্বানও জানান তিনি।
একই সঙ্গে ব্যক্তিজীবনে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী ও সৎ থাকতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার সকালে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণভবনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পরিচিত হন, বিভিন্ন বিষয়ে অভিমত নেন।

ছাত্রলীগের রাজনীতির স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছিলাম ক্ষুদ্র কর্মী। বদরুন্নেসা কলেজে নির্বাচিত ভিপি ছিলাম। সেই সময়টা ছিল কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ছিলাম। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো দিন আমাকে সদস্য বানায় নাই। এই দুঃখের কথা সব সময় আমি বলি। আমি তখন ঢাকা শহরের একটি কলেজের নির্বাচিত ভিপি। সেখানে আমাকে কেন্দ্রীয় সদস্যপদ দেওয়া হয়নি।’ এ সময় পাশে বসে থাকা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, নেত্রী, আপনাকে ছাত্রলীগের আজীবন সদস্য করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক, কোনো পদ পেলাম কি না পেলাম, সেটা চিন্তা করে রাজনীতি করিনি। আমি রাজনীতি করি জনগণের জন্য, দেশের জন্য।’ ছাত্রজীবনে রাজনীতির স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন মিছিলের জায়গা অনেক কম। কিন্তু আমরা পুরান ঢাকায় লম্বা পথ পাড়ি দিতাম মিছিলে। কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে মিছিল শুরু করতাম। মৌলভীবাজার হয়ে নওয়াবপুর রোড দিয়ে যেতাম। এভাবেই আমরা সংগ্রাম করেছি। অনেক সময় কলেজের দেয়াল টপকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতাম মিছিলে যোগ দিতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মাদকাসক্তি শারীরিক, মানসিক ক্ষতি করে, ভবিষ্যৎটাকে ধ্বংস করে দেয়। এটি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। সুতরাং অকালে যেন কেউ মৃত্যুর মুখে ঝরে না পড়ে, সেদিকে তোমরা অবশ্যই নজর দেবে এবং নেতা হিসেবে এটা তোমাদের দায়িত্ব। জঙ্গিবাদের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা দেখতে চাই না। কারণ, অতীতে এগুলো অনেক ক্ষতি করেছে। বছরের পর বছর সেশন জট তৈরি হয়েছে।’
ব্যক্তিজীবনে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী ও সৎ থাকতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা মা-বাবা, দাদা-দাদি সবার কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি, সেটি হলো মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটবে। এর শুধু একটাই অর্থ নয়। তুমি যে কেবল রাস্তা দেখছ সেটা না—এর অর্থ আরেকটা। তোমার জীবনের যতটুকু তোমার উপার্জন, যতটুকু তোমার আয়, যতটুকু তুমি ধারণ করতে পারো, সেটুকু নিয়েই তুমি চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওপরের দিকে যদি তাকাও, আর কার কী আছে, কে কী করল, এ নিয়ে যদি চিন্তা করো, তাহলে জীবনে হোঁচট খেতে হবে, শান্তি নষ্ট হবে। জীবনে আর উন্নতি করতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় নিজের যোগ্যতা, নিজের উপার্জন, নিজের যতটুকু প্রয়োজন, সেভাবে মিতব্যয়ী হয়ে যদি চলতে পারো অন্যদের সাহায্য করবে, যাদের কিছু নেই, তাদের সাহায্য করবে, যারা নিঃস্ব, তাদের পাশে দাঁড়াবে, তাদের সেবা করবে। জনগণের সেবাটাই হচ্ছে তার চেয়ে বড়। সেদিকে মনোযোগ দিয়ে তোমরা কাজ করবে।’
নেতা-কর্মীদের সৎ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সততাই তোমাকে মনোবল দেবে, শক্তি দেবে। আমি মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি একটা শক্তির বলে, যেটা মা-বাবার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি। আমাদের সন্তানদেরও যে শিক্ষা দিয়েছি, তোমাদেরও সেই একই শিক্ষা দেব।’
পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধনসম্পদ, টাকাপয়সা, বাড়ি-গাড়ি কিছুই থাকে না, থাকে কেবল বিদ্যা। এই বিদ্যাই দেবে সব পথ খুলে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ যেন ঠিক থাকে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই না এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক।’ তিনি বলেন, ‘অতীতে এভাবে অনেক ক্ষতি করেছে বছরের পর বছর সেশনজট। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সময় চলে গেছে, চাকরিও পাওয়া যায়নি। এ রকম একটা দুঃসময় গেছে। অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সেই সেশনজট মুক্ত করতে পেরেছি। এখন নিয়মিত পরীক্ষা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই, নিজের এলাকায় কাজ করো বা যেখানেই যাও, সেখানে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করো, তাহলেই আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করতে পারব।’
রাজনীতি ভোগের বিষয় নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবে, ক্ষমতা শুধু ভোগ করা নয়, দেশকে যেন কিছু দিতে পারি, দেশের মানুষকে যেন কিছু দিতে পারি; সেটাই সব সময় চিন্তা থাকবে।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ