জয় কিংবা ড্রয়ের কোনো অপশনই ছিল না তাদের মাথায়
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। এসময় তিনি নিউজিল্যান্ড সফরে খারাপ ফলের জন্য দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়ি করেছেন। দলের জন্য তাদের নিবেদন নিয়ে তার মনে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু তারা যদি দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতেন তাহলে ফল এতো খারাপ হতো না বলে মনে করেন তিনি।
বিসিবি সভাপতি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে পারেননি তারা। দলের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তাদের তখন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ধরনের ক্রিকেটেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, “টেস্টে আপনি জিততে পারেন, ড্র করতে পারেন। হারার জন্য তো কেউ খেলে না, তারপরও হারতে পারেন। নিউজিল্যান্ডে আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা যেভাবে খেলেছে সেখানে মনে হয়েছে, তারা হারের জন্যই খেলছে। ইচ্ছে করে তো আর কেউ করেনি কিন্তু খেলা দেখে যে কেউ বলবে এ কথা। জয় কিংবা ড্রয়ের কোনো অপশনই তাদের মাথায় ছিল না।” নাজমুল হাসান মনে করেন, মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হকের মতো তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানের চোটে বাকিদের কাছ থেকে যতটা দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত ছিল তার ধারে কাছে ছিলেন না অন্যরা।
“দলের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন খেলোয়াড় যখন ইনজুরিতে, তখন যদি আপনি এসে মেরে বসেন। পরে বলেন, এই শটেই তো আমি রান পেয়েছি। অথচ তার উপরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। বারবার একই শটে ওরা আউট হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।”
নাজমুল হাসান বলেন, “নিউজিল্যান্ডে সবগুলো ম্যাচ হারের পেছনে দায়ী আমাদের ব্যাটিং, দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড। হাত থেকে সহজ সব ক্যাচ ছুটেছে। তবে ব্যাটিংই আমাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। আর এখানটায় খারাপ করার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, শট সিলেকশনে ভুল।”
বারবার স্বাগতিকদের ফাঁদে পা দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। যখন দরকার ছিল সতর্ক ব্যাটিং তখনও খেলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ শট। দলের বিপদের সময়ও কেন নিজের ঝুঁকিপূর্ণ প্রিয় শটটি খেলতেই হবে তা বোধগম্য নয়।
“অনেকের হয়তো খেলার স্টাইলই এই রকম। তারা হয়তো বলবে এভাবেই খেলে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এই ধরনটা টেস্টের জন্য সহায়ক নয়। দলের জন্য যখন যেটা দরকার, দেশের জন্য যখন যেভাবে প্রয়োজন সেটাই তো করতে হবে। এটা শুধু একজন দুইজন খেলোয়াড় নয়, বেশিরভাগ সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যেই এই সমস্যা ছিল। ওরা যেভাবে খেলেছে এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই ধরনের ব্যাটিং কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয় সিনিয়রদের কাছ থেকে।”
সীমানার বাইরে থাকা একমাত্র খেলোয়াড়কে শর্ট বলে টেস্টে ক্যাচ দিয়েছেন তামিম। ড্রাইভ করতে গিয়ে বারবার বল না পেলেও সেই একই শট খেলার চেষ্টায় ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। পাঁচ ফিল্ডার রেখে সাকিব আল হাসানকে কাট করতে দিয়ে তার উইকেট নিয়েছে স্বাগতিকরা।
বিসিবি প্রধান মনে করছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
“ওই সময়টাতে ওই সমস্ত শট খেলার কথাই না। আপনি যদি দেখেন, আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা কি ধরনের শট খেলেছে- অবিশ্বাস্য লেগেছে। এখানে পরিকল্পনা ঘাটতি কোনো ভাবেই নেই। এটা পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড়রা খেলতে পারেনি। ওটাই আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে।”
“ওদের দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সবাই জানে এবং সবাই দেখেছে কিভাবে আউট হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে আমাদের ম্যাচের যে পরিস্থিতিতে যা দরকার সেটা হয়নি। এটা হতেই পারে ক্রিকেটে। এটা থেকে আমরা কিভাবে বের হয়ে আসতে পারি তার জন্য আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে।”
বিসিবি-প্রধান মনে করেন, দলের পরিকল্পনায় নয়; খেলোয়াড়দের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণে এই ভরাডুবি। জবাবদিহির অভাবে সিনিয়র খেলোয়াড়দের এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্স হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে তার সংবাদ সম্মেলনে। নাজমুল অবশ্য এ নিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা বললেন, ‘জবাবদিহি যে থাকে না, তা নয়। সমস্যা হচ্ছে, কিছু কিছু খেলোয়াড়ের আগের পারফরম্যান্স এত ভালো, দলের জন্য তারা এত গুরুত্বপূর্ণ, ওভাবে জবাবদিহি করা হয় না। আসলে তাদের বোঝানো ছাড়া কিছু করার নেই। তবে এই মুহূর্তে কী করণীয়, দল দেশে ফিরলে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করব।’
চোটের মিছিল দেখা গেছে এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে। চোটে পড়ে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে হাত ফাটিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিউজিল্যান্ড ছেড়েছেন গলায় স্লিং বেঁধে। খেলোয়াড়দের একের পর এক চোট ভাবাচ্ছে বিসিবির সভাপতিকেও, ‘শারীরিক সমস্যা আছে খেলোয়াড়দের। নইলে এতজন চোটাক্রান্ত হবে কেন? বল ধরতে গেলে, রান করতে গেলে ডাইভ দিতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, ডাইভ দিতে গিয়ে চোটে পড়বে কেন? জন্টি রোডসকে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। জন্টি রোডস এসে যদি দিনে দশটা ডাইভ দেওয়ায়, (তাহলে ওরা) অন্তত কিছুটা অভ্যস্ত হবে।’
সূত্র: বিডিনিউজ