হিলারিসহ অন্যদের লবিতে পদ্মায় অর্থায়ন বন্ধ হয়

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ অন্যদের সঙ্গে লবি করে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।  মাঈদুল ইসলাম তাঁর প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পদ ও তাঁর কার্যক্রমের বিষয়ে তদন্তের দাবি করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কোনো এক স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক আর উনি মিলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ফরেন সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটনসহ সবাই লবি করে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের টাকা দেওয়াটা বন্ধ করে দেন। যেখানে প্রকল্পের এক পয়সাও ছাড় হয়নি, সেখানে উল্টো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। শেষে বলা হলো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে।’
আইনের আশ্রয় নিয়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ হারিয়েছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উনাকে সরাইনি। তিনি মামলায় হেরে গেছেন। মামলা করার পরামর্শদাতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও তাঁর মেয়ে। আইনের কারণে উনার এমডি পদ চলে গেল। এরপর উনি আমাদের ওপর খেপে গেলেন। সেই খ্যাপাটা পড়ল পদ্মা সেতুর ওপর।’
অন্যের অনুরোধে হিলারি আমাকে ফোন করেন
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। তিনি প্রতি মাসে সরকারি বেতন নিতেন। তার প্রতি সবার দুর্বলতা ছিল বলেই তিনি যেভাবে চালান, সেভাবে চলছিল। ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকা যায়। কিন্তু ওই এমডি যখন ৭০ বছর পার করেছেন, তখনো তিনি এমডি ছিলেন। বিষয়টি তাঁকে জানাতে অর্থমন্ত্রী ও আমার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আপনাকে উপদেষ্টা ইমেরিটাস হিসেবে সম্মান দেব। আপনি পদটি ছেড়ে দিন। কিন্তু তিনি তা না করে মামলা করলেন। মামলায় তিনি হেরে গেলেন। দোষ পড়ল আমার ওপর। দোষটা দিলেন বিশ্বব্যাপী। তাঁর লবিস্ট আছে। অনেক টাকাপয়সা খরচা…অনেক বড় বড় জায়গা থেকে টেলিফোন এল। তাঁর অনুরোধে হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বললাম, বাদ তো আমরা দিচ্ছি না। উনি মামলা করে হেরে গেছেন। আর আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারেন। উনি তো আইন ভেঙে ৭০ বছর পর্যন্ত থেকে গেছেন। আদালত যে উনার কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০ বছরের জন্য টাকা ফেরত চায়নি, সেটাই বড় কথা।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি বিশাল অঙ্কের ‍সুদ তুলে নিয়েছেন। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি হিলারি ক্লিনটনকে যশোরে নিয়ে গিয়ে তাঁর হাত থেকে ঋষিপল্লির যাদেরকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, ঋণের ভারে তারা পরবর্তী সময়ে ওখানে টিকতে পারেননি। দুটি পরিবার তো খোঁজই পাওয়া যায়নি। ঋণের চাপে ভিটামাটি ছেড়ে দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আমার এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা নিলাম। সেখানেও একই ঘটনা দেখলাম। গরুর বাছুর কেড়ে নেওয়া। আমি নিজে একটি পরিবারকে ঘর করে দিয়েছিলাম। সেই ঘরও নিয়ে গেল। একজন মহিলা পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিল, তাঁর ঋণের বোঝা হলো ১৬ হাজার টাকা। পরে আমি নিজে টাকা দিয়ে তাঁকে ঋণমুক্ত করি।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৮ সালে বন্যার সময় মানুষ টিনের চালায় আশ্রয় নেয়। সেই সময় গ্রামীণ ব্যাংকের লোক গিয়েছিল টিনের চালা খুলতে। আমরা তখন তাঁকে বললাম, আপনি সুদ নিয়ে টানাটানি করবেন না। কোনো ক্ষতি হলে আমরা দেখব। পরে এ জন্য আমরা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। গ্রামীণ ব্যাংকের সেই স্বনামধন্য ব্যক্তি পদটি হারানোর পর ব্যাংকটির সুদের হার ৪০ ভাগে ওঠে না, ওটা ২৭ ভাগের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আগে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকাটা কেটে নেওয়া হতো। এখন তা করা হয় না।’

গ্রামীণফোন দরপত্রে তৃতীয় হয়েছিল, তবুও দিয়েছিলাম
গ্রামীণফোনের লাইসেন্স সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তিনি এসে আমাকে বললেন, একটি ফোন কোম্পানি দিলে তার লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ ঋণসুবিধা পাবে। তখন গ্রামীণ ব্যাংকটা দাঁড়াবে। উনার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। মোবাইল ফোনের একচেটিয়া ব্যবসা কমাতে তিনটি কোম্পানিকে অনুমতি দিলাম। গ্রামীণফোন দরপত্রে তৃতীয় হয়েছিল। তবুও আমরা তাকে দিলাম। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, গ্রামীণফোনের যে শেয়ার বাংলাদেশের থাকার কথা, তার অধিকাংশ তিনি বিদেশে দিয়ে ওটাকে সম্পূর্ণ নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে নিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকে গ্রামীণফোনের কোনো লভ্যাংশ যায় না। এটা চিটিংবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। রীতিমতো ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। ৩০ ভাগ মালিকানা নিজের হাতে রেখে বাকিটা বেঁচে দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি ট্যাক্সও দেন না। তাঁর প্রচুর টাকা আছে। কোথা থেকে এল এই টাকা। এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনি। এটা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি মামলা করে রেখে দিয়েছেন। ট্যাক্স না দিয়ে ভালোই চলছেন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলে বিশাল আকারে দেখানো হয়। উনাদের ব্যাপারে তেমন কোনো শব্দ শোনা যায় না। জানি না উনাদের বাচনিক ভঙ্গিতে কী ম্যাজিক আছে। তারা আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে আমার ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করিয়েছে, কোথাও এতটুকু খুঁত পাওয়া যায় কি না? কিন্তু তারা কিছুই বের করতে পারলেন না। মনে জোরটা ছিল বলেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। বিশ্বব্যাংকের টাকায় আমরা পদ্মা সেতু করব না।’

এর আগে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার এবং চক্রবৃদ্ধি আকারে তার সুদ এত বেশি দিতে হয় যে একজন মানুষ টাকা নিয়ে কখনো সুদ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশে চলে যায়। যার কারণে ঋণের বোঝায় অনেকে ঘরবাড়িছাড়া হয়ে গেছে, অনেকে এলাকা থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে, আত্মহত্যা করেছে। এমনটি সন্তান বিক্রি করেছে। ঋণের জন্য ঘরের চালের টিন খুলে নেওয়া হচ্ছে। গরু-বাছুর কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে নিঃস্ব হয়ে ভিটেমাটিছাড়া হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ