পরকীয়াসহ সব বিষয় তদন্তের দাবি বাবুলের শ্বশুরের
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মেয়ে হত্যার ঘটনায় পরকীয়াসহ সব বিষয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর বাবা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন এ দাবি জানান। তিনি বলেন, একজন নারীকে কেন খুন করা হবে? তাঁর কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। সম্পত্তি নেই। এ কারণে খুনি যে–ই হোক, বাবুল, তাঁর বংশধর, বন্ধুবান্ধব ও পুলিশের যেই হোক খুঁজে বের করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। পরকীয়া, প্রেমসহ সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পরকীয়ার কারণে এ খুন বলব না, পুলিশ সবকিছু দেখুক।’
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফের সঙ্গে কথা বলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তার ডাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে লালদীঘি এলাকার গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে যান শাহেদা ও তাঁর স্বামী মোশাররফ হোসেন।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান একাই বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন। পাশের কক্ষে বসা ছিলেন মোশাররফ হোসেন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার শেষের দিকে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মাহমুদার বাবা সাংবাদিকদের আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও বাবুলকে সব সময় প্রশ্ন করছি খুনি কে? এ জন্য চেয়েছি বাবুলের চাকরিটা থাক। খুনিদের বের করুক। অনেক মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন। স্ত্রী হত্যার রহস্যটাও বের করুক।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে তদন্ত কর্মকর্তার পাশের কক্ষে বসা মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, ‘বাদী ও সাবেক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাবুল আক্তার এবং তদন্ত কর্মকর্তা বের করুক খুনি কারা। আর খুনিরা কেনই–বা একজন মেয়েকে খুন করবে। খুনের মোটিভটা বের করা। ছেলেরা মাহারা। আমরা সন্তানহারা। খুনি যে–ই হোক, তা বের করা। পুলিশ বের করুক। অযথা কাউকে হয়রানি করতে চাই না।’
তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা শেষ হওয়ার পর মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাসংক্রান্ত কথা হয়েছে। খুনি যে–ই হোক, তদন্ত করে বের করার জন্য বলা হয়েছে। যাতে মেয়ে হত্যার বিচার পাই।’ বাবুল ও মাহমুদার দাম্পত্য সম্পর্ক কেমন ছিল, জানতে চাওয়া হলে তাঁদের মধুর সম্পর্ক ছিল জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে। শাহেদা বলেন, বাবুলকে সন্দেহ করি কি না, তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চাননি। তিনিও বাবুলকে সন্দেহ করেন না।
শাহেদা মোশাররফ আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি, মাহমুদার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি সচল রয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে সেটিতে ফোন করা হলে এক সিএনজি চালক ফোনটি ধরেন। তিনি সেটি হাতিরঝিলে পেয়েছেন জানিয়েছেন। তাই মুঠোফোনটি উদ্ধার করতে বলেছেন।
বাদী হিসেবে তদন্তে বাবুল আক্তার সহযোগিতা করছেন কি না, প্রশ্ন করা হলে শাহেদা মোশাররফ বলেন, তিনি তো এখন চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু কেস নিয়ে কোনো কথা বলেন না। মেয়ের খুনি কে তা বের করতে তাঁকে বলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান তাঁর কার্যালয়ে বলেন, মাহমুদার মায়ের সঙ্গে কথা বলে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ব্যবহৃত মুঠোফোনটি উদ্ধারের জন্য পুলিশের বিশেষ দল কাজ করছে। বাবুল ও মাহমুদার মা-বাবাকে মুখোমুখি করে কথা বলা হবে কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি শিগগিরই তা করতে পারেন বলে জানান। বাদী বাবুল আক্তার তার শ্বশুর–শাশুড়িকে নিয়ে আসেননি, অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। মামলার প্রয়োজনে বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি সহযোগিতা করছেন। বাবুল বা মাহমুদার কারও কোনো পরকীয়া সম্পর্ক ছিল কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এরপর ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রী এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’