কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান প্রধান বিচারপতি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ‘আমাদের এই বয়সে পরিবারের সঙ্গে থাকার কথা, তবে আজ বিচ্ছিন্ন। প্রত্যেকেই অপরাধী নয়, অনেকে ষড়যন্ত্রের শিকার’—কথাগুলো বলল গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা একজন। সে দাবি করে, মাদক পাওয়ার অভিযোগের মামলায় সে আজ এখানে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কাছে পেয়ে এসব কথা বলে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা কিশোর। আজ বৃহস্পতিবার আকস্মিক ওই উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান প্রধান বিচারপতি। প্রথমে তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
কিশোর ও কিশোরী—এই দুই উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি ওখানে থাকা নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আইনের সংঘাতে জড়িত এবং সংস্পর্শে আসা এই শিশু-কিশোরদের অবস্থা ও সমস্যার কথা শোনেন। পাশাপাশি এসব নিবাসীর মামলার বিষয়েও খোঁজখবর নেন তিনি।
প্রধান বিচারপতির কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ডরমিটরির ভবন পরিদর্শনের সময় আরেক নিবাসী বলে, আসছে ২ ফেব্রুয়ারি আমার এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিতে চাই, মাদকের মামলার কারণে এখানে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বললেন, তুমি অবশ্যই পরীক্ষা দিতে পারবে।
এ সময় যারা পরীক্ষা দেবে, সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে আটক —এসবসহ ছোটখাটো অপরাধে কেন্দ্রে থাকা নিবাসীদের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির কাছে একজন অভিযোগ করে, এখানে খাবারের মান ভালো না। একই কক্ষে তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন কিশোর বলে ওঠে, প্যান্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেয়। এটি অমর্যাদার।
আরেক কক্ষের এক কিশোর তার মাথা ও হাত দেখিয়ে বলে, রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। স্বর্ণ চুরি করছি বলে ধরেছে। তার অভিযোগ, হেফাজতে পুলিশ তাকে মেরেছে।
প্রধান বিচারপতি এই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টার মতো সময় কাটান। এ সময় প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রে থাকা কিশোরদের মামলার ধরন, অবস্থা ও অবস্থানের সময়সীমাসহ বিস্তারিত পাঠাতে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনের সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারজানা ইয়াসমিন।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, আইনের সংঘাতে জড়িত বা আইনের সংস্পর্শে আসা এমন ৪১১ জন রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে বয়স উল্লেখ নেই ৮২ জনের, নয় বছরের নিচে ১৭ শিশু ও ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীর সংখ্যা ২৯২। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে আছে সাতজন।
কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র
সকাল পৌনে ১০টার দিকে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পৌঁছান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রথমে তিনি প্রশাসনিক ভবনে ও পরে ডরমিটরিসহ বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন।
প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত শিক্ষা কার্যক্রমে প্রথম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিশু বলে, ‘এখানে আমার ভালো লাগে না।’ আরেকজন বলে, বাবার সঙ্গে ট্রেনে উঠতে গিয়ে হারিয়ে গেছি। বাড়ি কুমিল্লা, বাবা রিকশা চালাতেন। এর বেশি কিছু মনে করতে পারেনি এই শিক্ষার্থী।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (এমব্রয়ডারি) কক্ষ পরিদর্শনকালে একজন বলে, তার বয়স সাড়ে ১৭ বছর। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এখানে কীভাবে? জবাবে সে বলে, জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল, তাই পালিয়ে যাই। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কেন্দ্রের আরেক কিশোরী বলে, মা নেই, বাবা আছে। তবে বাবা নিতে চায় না। তার (বাবা) ধারণা, বাসায় নিয়ে গেলে আবার পালিয়ে যাব। বাবার কাছে যেতে চাই। পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের সবার মামলার বৃত্তান্ত সরবরাহ করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, কেন্দ্রে এখন ১০৯ জন আছে। এর মধ্যে ১১ জনের বয়স নয় বছরের নিচে। বাকিরা ৯ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। ১০৯ জনের মধ্যে ভিকটিম ৫২ ও নিরাপদ হেফাজতে ৫১ নিবাসী। এর মধ্যে ২২ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে।