সংবাদিক নির্যাতনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি

প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি,

ঢাকা : এটিএন নিউজের সাংবাদিক এহসান বিন দিদার ও আব্দুল আলিমের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তারা হামলাকারী পুলিশদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অতীতে সাংবাদিকদের ওপর সকল হামলার দ্রুত বিচার ও সাংবাদিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান ।

২৮ জানুয়ারি  (শনিবার) বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘ‌রের সামনে মানববন্ধনে সংবাদকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক পিটিয়ে পদোন্নতির অপসংস্কৃতি বন্ধ করেতে হবে। বিচার করতে হবে জড়িত পুলিশ সদস্যদের। একই সঙ্গে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনাকে ‘ধাক্কাধাক্কি’ বলে দেয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা।

এসময় যত সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছে, তাদের সবার বিচারের দাবিতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারির বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

তাদের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা বলেন ।

মানববন্ধনে বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করি। তাকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য পুলিশ-প্রশাসনকে সাংবাদিক নির্যাতনে উৎসাহ দেবে। বুলবুল আরও বলেন, বহুবার গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু গত সময়ে কোনো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সব সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান মুন্নী সাহা বলেন, একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে সাংবাদিক নির্যাতন করলে পদোন্নতি পাওয়া যায়। যদি এমনটি বলা হয়, তাহলে আমরা আমাদের ক্যামেরা, বুম সবকিছু রেখে এসে দাঁড়াব। তারা এসে আমাদের পিটিয়ে পদোন্নতি নিয়ে যাক। এটা কোনও কথা হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। নিরস্ত্র সাংবাদিকদের পুলিশ যেভাবে পিটিয়েছে, সেটা মানবতাবিরোধী। এই ঘটনার জন্য যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, আশা করা যায়, সে তদন্ত কমিটি সুষ্ঠুভাবে প্রতিবেদন দেবে। মুন্নী সাহা আরো বলেন, আজ এই সমাবেশস্থলে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তারা কোনো সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হননি। প্রত্যেকে নিজ নিজ উদ্যোগ এই সমাবেশে এসেছেন। সাংবাদিকদের নির্যাতনের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ খান বলেন, যারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাস্যকর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে বৃহত্তম আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) এর সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে প্রমাণিত শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কা-ধাক্কি হয়েছে নাকি নির্যাতন হয়েছে। সেদিন পুলিশ সদস্য যে ফৌজধারী অপরাধ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে ধাক্কা-ধাক্কি মন্তব্য কোনভাবেই কাম্য নয়।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) এর সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেছেন, যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে ধাক্কা-ধাক্কি মন্তব্য প্রত্যাহার ও দোষীদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দফতর সম্পাদক নয়ন মুরাদ বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের পর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তাই রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের দাবি আমাদেরই আদায় করতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) এর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়া বলেন, আমরা অতীতেও দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের উদাসীনতার কারণে সাগর রুনিসহ বহু সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয়নি। তাই আবারো সাংবাদিক নির্যাতন ইস্যুতে সরকারের কাছে দাবী জানাবো অতীতের সকল সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ক্যামেরা পার্সনদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান করতে হবে এবং শাহবাগে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য প্রত্যাহার করে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা আধা বেলা হরতাল পালন করে। হরতাল চলাকালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক এহসান বিন দিদার ও ক্যামেরাম্যান আবদুল আলীম পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এছাড়াও এ ঘটনায় শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি অভিযোগও নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় রাজশাহীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দুঃখ প্রকাশও করেন। পরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মাঝেমধ্যে পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়। গত বৃহস্পতিবার তাই হয়েছে। পুলিশ সাংবাদিক নির্যাতন করে না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ