নাম দেওয়া নিয়ে বড় দুই দলই দ্বিধায়
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে অনুসন্ধান কমিটিতে নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে দোটানায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দোটানায় থাকলেও বিএনপি নাম পাঠানোর কথা ভাবছে। এ দুই দলসহ অন্য কয়েকটি দলের কিছু নেতা মনে করছেন, রাজনৈতিক দল থেকে নাম এলে বিতর্ক আরও বাড়বে। যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হবে, তাঁরা নিরপেক্ষতা হারাতে পারেন।
ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচজন করে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নাম চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। গত শনিবার কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেওয়ার কথা জানানো হয়। গতকাল রোববার ১৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাতটি দল অনুসন্ধান কমিটিতে নামের তালিকা দেবে বলে জানিয়েছে। এই দলগুলো হচ্ছে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদ (আম্বিয়া), জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি ও তরীকত ফেডারেশন। জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্যরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগ আজ সোমবার রাতে বৈঠক ডেকেছে। আজ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। তবে দায়িত্বশীল নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাঁরা নাম দিতে আগ্রহী নন।
আওয়ামী লীগের অন্তত ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনো তাঁর মনোভাব প্রকাশ করেননি। আজকের বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, রাজনৈতিক দল থেকে নাম দিলে বিতর্ক হতে পারে।
এদিকে বিএনপির নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাঁদের ধারণা, সরকারের চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে নাম দেওয়া হলেও আমলে নেওয়া হবে না। উল্টো যাঁদের নাম দেওয়া হবে, তাঁদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি করবে সরকারি দল। আবার নাম না দিলে সরকারি দল দোষারোপ করতে পারে কি না, সে বিষয়টিও তাঁদের মাথায় আছে।
সব মিলিয়ে গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনারদের নাম দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির এমন দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বলেন। তবে বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটির কাছে বিএনপি নাম প্রস্তাব করবে কি না, তা আজ সোমবার চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপি জোটের শরিক বিজেপি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও এলডিপিও নাম না দেওয়ার পক্ষে। তারাও মনে করে, নাম দিলেও খুব একটা লাভ হবে না। তবে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে।
এ দুই জোটের বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অনুসন্ধান কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা কারও নাম প্রস্তাব করবে না। উল্টো তারা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, এটা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। দলগুলো নাম দিলে বিতর্ক বাড়তে পারে। গণফোরামও বলছে, তাদের পক্ষ থেকে নাম দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নাম পাঠাব। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ঢাকার বাইরে আছেন। তাঁরা এলে শিগগিরই আমরা বসে নাম ঠিক করব।’
আশা কম হলেও প্রক্রিয়ায় থাকতে চায় তারা
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁদের কোনো আলোচনা হয়নি। অনেকে নিজেরা বৈঠক করে নাম ঠিক করেছেন। অনেকে নাম ঠিক করার জন্য আজ বৈঠক করবেন। নেতারা বলেন, অনুসন্ধান কমিটি বিশিষ্ট ১২ জন নাগরিকের মতামত নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা ভালো উদ্যোগ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা হলেও তাঁরা এতে অংশ নেবেন। কারণ, রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে তাঁরা এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে।
জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, সময় খুব কম। যাঁদের নাম দেবেন, তাঁদের কাছ থেকে আগে অনাপত্তি নিতে হবে। আজ বৈঠক করে সব ঠিক করা হবে।
জাসদের আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারও জানিয়েছেন, তাঁরাও যথাযথ সময়ের মধ্যে নাম পাঠাবেন। তবে এর আগে আজ বৈঠক করবেন।
জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা আশাবাদী। এই প্রক্রিয়ার আমরা অংশ হতে চাই। সুন্দর একটি ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আছে।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ দলের দুটি শরিকের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের করা অনুসন্ধান কমিটিতেও তাঁরা নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব নাম রাখা হয়নি। কমিটি নিজেদের মতো করেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
শরিকেরা তাকিয়ে বিএনপির দিকে
বিএনপির শরিক দলগুলোও বিএনপির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, তাঁর ধারণা, আগে থেকে ঠিক করে রাখা ব্যক্তিদের দিয়েই কমিশন গঠন করা হবে। কারণ, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে দলগুলো যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, তার কোনোটাই প্রতিফলিত হয়নি। অনুসন্ধান কমিটি যে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে, দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে—এসব অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা। তারপরও নাম দিলে যে হারানোর কিছু আছে, তা-ও নয়।
১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় আজ
আজ সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করবে অনুসন্ধান কমিটি। মতবিনিময়ে অংশ নেবেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। গত রাতে তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটির উদ্যোগ ভালো। তবে তা যেন লোকদেখানো না হয়। অর্থাৎ, আমার কাজ আমি করমু, তোমাকে জানাইয়া লমু—এমনটা যেন না হয়।’ তিনি বলেন, একটি বস্তুনিষ্ঠ মানদণ্ডের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যেন অনুসন্ধান কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করে। কারণ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষের আস্থা অর্জন। আর অনুসন্ধান কমিটি যাঁর নাম প্রস্তাব করবে, তিনিই কেন যোগ্য এর একটা ব্যাখ্যাও থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের খোলা মন নিয়ে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নাম সুপারিশ করা উচিত।
ইসি গঠনে ১০ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করার লক্ষ্যে গত বুধবার ছয় সদস্যের এই অনুসন্ধান কমিটি ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।