কণিকা হত্যা মামলায় যুবকের ফাঁসির রায়

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: স্কুলছাত্রী কণিকা হত্যা মামলায় আবদুল মালেক নামের এক যুবকের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন শিশু আদালতের বিচারক চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়াউর রহমান।

গত বছরের ২৭ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহিপুর এসএএম উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মহিপুর গ্রামের মৃত লক্ষণ ঘোষের মেয়ে কণিকা ঘোষকে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আবদুল মালেক। এ ছাড়া ওই সময় কণিকার তিন সহপাঠী বেহুলা গ্রামের মো. মকবুলের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, অরুণবাড়ী গ্রামের মো. তাজেমুলের মেয়ে তানজিলা খাতুন ও নসিপুর গ্রামের আবদুল খালেকের মেয়ে তারিন আফরোজকে মারাত্মকভাবে আহত করেন ওই যুবক। কণিকার তিন সহপাঠীকে আহত করার দায়ে আবদুল মালেককে ৩২৬ ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০৭ ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এসব দণ্ড চলতে থাকবে।স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, আবদুল মালেক মাদকাসক্ত ও বখাটে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তিনি প্রায়ই হাঁসুয়া হাতে ঘুরে বেড়াতেন এবং লোকজনকে ভয় দেখাতেন। এর আগেও তিনি একাধিক লোকের ওপর হামলা চালিয়েছেন। মাদকসেবন করে মাতলামি করার অপরাধে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

সরকারি কৌঁসুলি জবদুল হক ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৭ মে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মহিপুর থেকে প্রাইভেট পড়ে কণিকা ও তার তিন সহপাঠী বাড়ি ফিরছিল। পথে মাদকাসক্ত বখাটে যুবক দিয়াড় ধাইনগর গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে আবদুল মালেক হাঁসুয়া নিয়ে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে সবাই মারাত্মকভাবে আহত হয়। সদর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে কণিকা মারা যায়। কণিকার মা অঞ্জলি রানী ঘোষ বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন।

জবদুল হক জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুর রশিদ। পরে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ওয়ারেশ আলী মিয়াকে তদন্তভার দেওয়া হয়। তিনি তদন্ত শেষে আসামি আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে আদালতে গত বছরের ৭ অক্টোবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন। নিহত কণিকা ও তার তিন সহপাঠী শিশু হওয়ায় এর মামলার বিচারকার্য শিশু আদালতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর শুরু হয়। এই মামলায় আদালতে ২১ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়। এ বছরের ২৬ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

আদালত রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নিহত কণিকার মা অঞ্জলি রানী ঘোষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার মেয়ের আত্মাও শান্তি পাবে। তবে রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’

অঞ্জলি রানী বলেন, ‘কণিকাকে কুপিয়ে মারার চার মাস আগে ওর বাবা মারা যায়। ওকে নিয়েই আমি মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানিয়ে সংসার চালাতাম। তার বাবার মৃত্যুতে আমি যেন ভেঙে না পড়ি, সে চেষ্টা ও সব সময় করত। আমাকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করত। বলত, “বড় হয়ে চাকরি করে তোমার সব দুঃখ দূর করব আমি।” মেয়েটা এভাবে অকালে মারা যাওয়ায় আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তাকে আমি একটি দিনের জন্যও ভুলতে পারি না।’

কণিকার সহপাঠীরা প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলে, সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি তাদের প্রতিমুহূর্তেই তাড়া করে ফেরে। ঘুমের ঘোরে ভয় পেয়ে বহু রাতে চমকে উঠেছে তারা। কণিকা থাকলে একসঙ্গেই আগামীকাল বৃহস্পতিবার তারা এসএসসি পরীক্ষা দিতে যেত। সে ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী। এ রায়ে তাদের মনের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। সহপাঠীরা আবদুল মালেকের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানায়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ