জমে উঠছে ‘শিল্পী সংঘে’র নির্বাচন, এগিয়ে তায়েব
প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ
টেলিভিশন শিল্পীদের সংগঠন ‘শিল্পী সংঘ’র দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন নাটকের জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীরা। নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে এখন তিনি তুমুল ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছেন। প্রত্যেক ভোটারের কাছে স্বশরীরে হাজির হয়ে ভোট চাচ্ছেন। তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে সমানভাবে ভোট চাচ্ছেন।
এই নির্বাচনে কোনো প্যানেল নেই। সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। মোট ২১টি পদে ৫১ জন প্রার্থী একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছেন। মোট ভোটার সংখ্যা ৭১৫ জন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৩ নং কক্ষে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন এস এম মহাসীন।
অভিনয় শিল্পী সংঘের এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন মোট ৪ জন। তারা হচ্ছেন- ডি এ তায়েব , শহীদুল আলম সাচ্চু, শহীদুজ্জামান সেলিম এবং গোলাম মোস্তফা। অন্যদিকে তিনটি সহ সভাপতি পদের জন্য লড়ছেন আজাদ আবুল কালাম, তানভিন সুইটি, আদিত্য আলম, ইকবাল বাবু, তারিন, জাহিদ হোসেন শোভন এবং রফিকুল্লাহ সেলিম।
এ দিকে সভাপতি পদে লড়ছেন- ডি এ তায়েব প্রশঙ্গে নাট্ট নির্মাতা ফরিদুল হাসান বলেন, তিনি এমন একজন অভিনেতা যিনি খুব সহজে সকলকে আপন করে নিতে পারেন। কে বড় আর কে ছোট-এ ভেদাভেদ তিনি করেন না। সকলের সাথেই তার স্বভাবসুলভ বিনয় এবং হাসিমুখে মিশেন ও কথা বলেন। এমনকি কেউ যদি বিপদে পড়ে গভীর রাতেও তাকে ফোন করেন, তিনি তা ধরেন এবং তার জন্য যথাসাধ্য উপকার করার চেষ্টা করেন। ফলে নাট্যাঙ্গনে তিনি ‘দুঃসময়ের বন্ধ’ু হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
আর সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য লড়বেন আহসান হাবীব নাসিম, মীর সাব্বির ও সিদ্দিকুর রহমান।
সভাপতি পদপ্রার্থী ডি এ তায়েব বলেন, আমি বিভেদ চাইনা । আমি নতুন-পুরাতন শিল্পীদের সাথে এক হয়ে কাজ করতে চাই। অভিনয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বঞ্চিত ও অসহায় শিল্পীসহ সকল শিল্পীর স্বার্থ এবং আত্মমর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে যে কারো দুঃসময়ে আজও আছি ভবিষ্যতেও পাশে থাকবো। তিনি নির্বাচিত হলে মিডিয়া ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার নির্মাণ করবেন ।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ধানমন্ডি হাসপাতাল প্রাইভেট লি. এবং ধানমন্ডি ক্লিনিক প্রাইভেট লি. এ সকল অভিনয় শিল্পীদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ কম খরছে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি । এর পাশাপাশি সব শিল্পীদের জন্য একটি শিল্প নগরী স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। যেখানে অভিনয় শিল্পীরা স্বল্প খরছে কিস্তির মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে বাসস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন।
আরেক সভাপতি পদপ্রার্থী শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমার স্লোগান হচ্ছে- বিভাজন নয়, গতিশীলতা। আমি এই বিষয়কে সামনে রেখে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। শিল্পী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকাটা সব শিল্পীর জন্য জরুরি। টেলিভিশনের মান উন্নয়নে যেন অভিনয় শিল্পীরা অবদান রাখতে পারেন, আমি তাই চাই।’
এদিকে শিল্পী সংঘের নির্বাচনে ডি এ তায়েব এগিয়ে থাকার যে কারনগুল দেখছে শিপ্পীরা- প্রধানমন্ত্রীর কাছে অসহায়, দুঃস্থ ও অসুস্থ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রীর রানী সরকার, চিত্রনায়িকা বনশ্রী, চিত্রনায়ক আব্দুস সাত্তার, অভিনেত্রী মায়া ঘোষ, রানু দাশ, শুভ্রাকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। ডি এ তায়েবের নির্বাচনী ইশতিহারে শিল্পী মহলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করছেন, তিনি নির্বাচিত হলে শিল্পীদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে যেমন সহায়ক হবেন, তেমনি যে কোনো সমস্যায় তাকে কাছে পাওয়া যাবে। তারা এমন একজন নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্বকেই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখতে চান।
এদিকে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের ভোটারদের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, তারা ডি এ তায়েবের এ অঙ্গীকার এবং উদ্যোগী ভূমিকায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা মনে করছেন, তার মতো একজন কার্যকর ও নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্বেরই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া উচিত ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘আমরা অভিনয় শিল্পীরা যেন যে কোনো সুন্দর কাজে একত্রে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারি সেই ভাবনা থেকেই নির্বাচনে এসেছি। চাই সুস্থ, সুন্দর একটা নির্বাচন। সব সংকট কাটিয়ে সম্ভাবনার দিকে যেতে চাই।’
এছাড়াও অভিনেতা শহিদ আলমগীর অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সাংগঠনিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন লুত্ফর রহমান জর্জ। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন।
মিলন বলেন, ‘শিল্পীদের যাবতীয় স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন করছি। আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি।’
আইন ও কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে লড়ছেন শামীমা ইসলাম তুষ্টি এবং শিরিন বকুল। এ ছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে হিল্লোল এবং অনি, দফতর সম্পাদক পদে শামস সুমন, তানভীর এবং আবদুল হান্নান লড়ছেন।
অর্থ সম্পাদক হিসেবে তানিয়া আহমেদ একাই প্রার্থী হয়েছেন। যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে রওনক হাসান, সুমনা সোমা প্রমুখ লড়ছেন। প্রচার সম্পাদক হিসেবে লড়ছেন উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহারিয়ার নাজিম জয়।
উর্মিলা বলেন, ‘নেত্রী হওয়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। শুরুটা শিল্পী সংঘ থেকেই হোক। আর আমি এই সংগঠনের সঙ্গে থাকতে চাই। এখানে সময় দিতে চাই। অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ আছে এখান থেকে।’
এ ছাড়াও কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে ৭ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নির্জন আজাদ, নিকুল কুমার মণ্ডল, ইন্তেখাব দিনার, জাকিয়া বারী মম, মুকুল সিরাজ, নওশীন নাহরীন মৌ, সনি রহমান, সেলিম মাহবুব, সুজাত শিমুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, শিল্পী সংঘ প্রতিষ্ঠা হয় ২০০২ সালে। প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন ফেরদৌসী মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৌকির আহমেদ।