মুনিরার সেই বিখ্যাত পোস্টার ! 

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ

সাম্প্রতিক সময়ে, অ্যামেরিকা জুড়ে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে একটি পোস্টার বেশ চোখে পড়ছে। সমাবেশে আগত মানুষের কাছে তা হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা। পোস্টারটির বিষয় বস্তু হচ্ছে একজন অ্যামেরিকান মুসলিম নারী যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাকে হিজাব হিসেবে পরিধান করেছেন। এই ছবিটির যিনি নারী মুখ, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশী অ্যামেরিকান মুনিরা আহমেদ। সম্প্রতি ভয়েস অফ অয়ামেরিকার স্টুডিও থেকে স্কাইপের মাধ্যমে সাবরিনা চৌধুরী কথা বলেছেন মুনিরা আহমেদের সংগে।
এখানে সাক্ষাতকারটির অনুবাদ দেয়া হল।

১। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশে এই পোস্টারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আরম্ভটা কিভাবে হল?
প্রায় ১০ বছর আগে ফটোগ্রাফার রিদওয়ান আদহামি, মুসলিম অ্যামেরিকানদের একটি পত্রিকা ইলুমে ম্যাগাজিন এর জন্য এই ফটোশুটটি করেছিল। স্থানটি নির্ধারন করা হয়েছিল নিউ ইয়র্ক এ গ্রাউন্ড জিড়োর কাছা কাছি অর্থাৎ যেখানে প্লেন দুটি ভূপাতিত হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কাকতালিয়ভাবে এই ছবিটি তোলা হয়, ওয়ালস্ট্রিট এ ট্রাম্প বিল্ডিং এর সামনে। সে সময় অনেক পত্র পত্রিকাই এই ছবিটি ব্যবহার করেছে। তবে এ বছর এমপ্লিফাইয়ার ফাউন্ডেশন, ফটোগ্রাফার রিদওয়ান আদহামির সাথে যোগাযোগ করে এবং জানায় যে তারা এ ছবিটি বিখ্যাত অংকন শিল্পী শেফার্ড ফেইরি কে দিয়ে আবার রিক্রিয়েট করাতে আগ্রহী। শেফার্ড ফেইরির অগনিত বিখ্যাত ছবিওগুলোর মধ্যে একটি হল ওবামার “হোপ” পোস্টার। এ বছর তার তৈরী “We the people“ প্রজেক্টটি বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। হিজাব পরিহিত ছবিটি এ প্রজেক্টটির একটি অংশ।
২। এই ছবিটির মাধ্যমে কি বার্তা পৌছাতে চান?
এই ছবিটির মাধ্যমে যে বার্তাটি আমি পৌছাতে চাই তা হলো এদেশে একজন মুসলিম কোন অংশেই কম অ্যামেরিকান নয়। আমি যেমন একজন মুসলিম, তেমনি একজন অ্যামেরিকানও। এর সন্ত্রাসী আক্রমনের ছয় বছরের মাথায় ২০০৭ সালে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল। সে সময় সন্ত্রাসী আক্রমনের এ বিষয়টি বেশ আলোচিত ছিল। অনেকেরই প্রশ্ন ছিল আমরা মুসলমানরা কেন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছি না। কেন আমরা বলছি না সব মুসলমান এক নয়। তখন আমার মনে হল একটা কিছু করতে হবে এবং আমার মনে হয় রিদওয়ান আদহামিও তাই চাইছিল। আর তাই আমরা এই ছবিটির মাধ্যমে জানাতে চেয়েছি, যে আমরা মুসলিম, আমরা অ্যামেরিকান, আমরা আমাদের এই সত্তার সাথে কোন আপোস করব না। এবং এই ছবিটি সেই মূল্যবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে।
৩। আপনি সাড়া জাগানো ওম্যানস মার্চ এবং অন্যান্য প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহন করেছিলেন। সেখানে আপনার পোস্টারটি সমাবেশে আগত মানুষের হাতে হাতে দেখা গেছে। আপনার অভিজ্ঞতা?
ওয়াশিংটন ডি সি তে অনুষ্ঠিত ওম্যানস মার্চ ছিল আমার জন্য অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। সাড়া অ্যা অমেরিকা জুড়ে এমনকি বিশ্বের অনেক স্থানে এই সাড়া জাগানো সমাবেশটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মাধ্যমে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। প্রতিবাদের ভাষা সোচ্চার হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমস্ত কঠোরতা অবল্মবন করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হয়েছি এবং তাকে জানাতে চাই আমাদের এই দাবি আদায়ে আমরা পিছু হটব না।
৪। বিক্ষোভ সমাবেশে কেউ কি আপনাকে চিনতে পেরেছিল?
আমার মনে হয় না কেউ আমাকে চিনতে পেরেছিল।এটা তো দশ বছর আগের একটি ছবি। তাছাড়া শেফার্ড ফেইরি ছবিটি থেকে পোস্টারের জন্য যা এঁকেছিলেন তা অনেকটা কমিক বই এর এ্যানিমেটেড ছবির মত। সুপারহিরোদের যেমন আঁকা হয়। তবে একজন আমাকে বলেছিলেন আমি জানি এই ছবির মুখটি তুমিই হবে। তিনি হচ্ছেন কংগ্রেসম্যান জাকি স্পাইসার। আমি জানিনা তিনি কিভাবে বুঝতে পারলেন, বোধহয় কারো কাছ থেকে শুনেছিলেন। এদিকে আমি বিক্ষোভে অংশগ্রহনকারী অনেকের সাথেই ছবি তুলেছি, তাদের হাতে আমার ছবির পোস্টার। কেউ বুঝতেও পারেনি ছবিটি আমার। অনেকেই ছবি তোলার পর হেঁটে চলে গেল। আবার অনেকেই যখন জানতে পেল তারা বিস্মিত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
৪। আপনি বাংলাদেশী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। এদেশে আপনার বেড়ে উঠার কথা কিছু বলবেন?
আমার এদেশে জন্ম, এদেশে বড় হওয়া। তবে ছোট বেলা থেকে আমার বাবা মার সাথে বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে যাওয়া হত এবং অংশগ্রহন করা হত। আমার বাবা ফার্মাসিস্ট, আমার মা এখানে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বেশ সক্রিয়, তাই অন্যান্য বাংলাদেশী পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাথে মেশার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার যখন ১ বছর তখন আমার দাদী এখানে আসেন। উনার সাথে এবং আমার আত্বীয়দের সাথে আমি বাংলায় কথা বলি।

৫। আপনি বাস্তব জীবনে হিজাব পড়েন না। তবে এই ছবিটি একটি হিজাব পরিহিত নারীর প্রতিকী রুপ। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য?
হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, আমি হিজাব পড়ি না। তাই রিদওয়ান আদহামি যখন এই ফটোশুটটির কথা আমাকে জানালো তখন আমি ভেবেছিলাম, এটা কি আমার জন্য ঠিক হবে। তবে আমি মনে করি হিজাব শুধুমাত্র একটি পরিধেয় কাপড় না যা দিয়ে শুধু মাথা ঢাকা হয়। এর অন্তর্নিহিত প্রতিকী মানে আছে। রিদওয়ান আদহামী হয়তোবা অন্য কোন নারীকে নিয়েও কাজ করতে পারতেন যিনি হিজাব পড়েন। তবে আমি তা আর প্রশ্ন করিনি। সে সময় আমার অন্যান্য মুসলিম বোনদের কথা ভেবেছি, অ্যামেরিকায় মুসলমানদের সে সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে ভেবেছি। চেয়েছি ছবির মাধ্যমে কিভাবে একটি বক্তব্য দেয়া যায়।
তবে অনেক মুসলিম নারীই হিজাব পড়েন, আবার অনেকেই পড়েন না। আমি মনে করি এটি নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমি তাদের সিদ্ধান্ত সন্মান করি। এ নিয়ে কেউ কাউকে বিচার করার অধিকার নেই। একমাত্র খোদাই তা করতে পারেন। আমি মনে, প্রানে একজন মুসলিম এবং সেই সাথে একজন অ্যামেরিকান। আর এ ছবিতে এদেশে বসবাসরত মুসলমানদের মূল্যবোধের একটি প্রতিক ফুটে উঠেছে।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ