সাংবাদিকতাই সব শাকিলের
প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা:
শাকিলুর রহমান শিশুসাংবাদিকতায় সমাদৃত একটি নাম। শাকিল এখনো মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়নি। পড়াশোনা করছেন পাল্লা বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজে ১০ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে। দেশের প্রথম নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের জনপ্রিয় বিভাগ হ্যালো এবং প্রিজমে শিশু রিপোর্টার হিসাবে কাজ করছেন। এরই মধ্যে তিনি সাপ্তাহিক ‘অর্থকাল’ পত্রিকা শিশু রিপোর্টার। অনলাইন টেলিভিশোনের ‘চ্যানেল আগামী’ স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও অনলাইন মুক্ত সংবাদ, বিজয়ের আলো, ফটোনিউজ বিডি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিশুসাংবাদিকতাকে আরো বেগবান করতে বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকম ও ইউনেসেফ মাধ্যমে তাকে মোবাইল দিয়েছেন। পেয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের আরো নানা পুরস্কার। স্বল্প সময়েই তিনি করেছেন এতো সব অর্জন। তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আর তাই তো পড়াশুনার ফাঁকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিভা বিকাশের সংগ্রাম। তার ভাষায়, তার কাছে সাংবাদিকতা সব। সংবাদ করার মধ্য দিয়েই অগণিত পাঠকের ভালোবাসা পেতে চাই। জীবনে পথচলা বড়ই কঠিন। অনেক বাঁধা পেরিয়ে পথ চলছি নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।
তরুণ এ সাংবাদকর্মী শাকিলুর রহমানের জন্ম মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। শৈশবের দিনগুলো কাটে সেখানেই। বাবা সাইফুর রহমান সব,সেনাবাহিনী এবং মা গিরিহিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তার স্থান তৃতীয়। পড়ালেখা জীবন সম্পর্কে শাকিলের সবার মত প্রাইমারি স্কুলজীবন তো প্রাইভেট, স্কুল ও বাড়ি – এই তিন জায়গার মধ্যেই বন্দি ছিল। আর প্রাথমিক জীবনের প্রথম ধাপ ১-৫ শ্রেণী কেটেছে পাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর হাইস্কুল জীবনের প্রথম ধাপ ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণী কেটেছে পাল্লা বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজে। জেএসসি পরীক্ষায় এই স্কুল থেকেই অংশ নিই। এখান থেকেই জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৬৯ পেয়েছি। বর্তমানে আমি পাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছি।
সাংবাদিকতা শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে শাকিল জানায়, মহম্মদপুর উপজেলা থেকে এক বড় ভাই আমাকে বলে আমি একটি পত্রিকায় তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। তোমাকে দীঘা ইউনিয়ান প্রতিনিধি করে দিচ্ছি। সেখান থেকেই সাংবাদিকতার জীবন শুরু।
২০১৬ সালে ফেসবুকে পরিচয় হয় মো আল্লাউদ্দিন নামে এক শিশু সাংবাদিকের সাথে পরিচয় হয়। তিনি শাকিলকে ‘হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকম ’ অনলাইন নিউজ পোর্টালে শিশু রিপোর্টার হিসেবে কাজ কররা সুযোগ করে দেন। এরপর পরিচয় হয় সাপ্ততাহিক ‘অর্থকাল’ পত্রিকার সম্পাদকের সাথে তিনি শাকিলকে শিশু রিপোর্টার করে দেন। এভাবেই শুরু হলো তার সাংবাদিকতায় পথ চলা।
সাংবাদিকতার শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত , একাত্তর টিভির মাগুরা জেলা প্রতিনিধি শরীফ তেহরান টুটুল, বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিক আমিনুর রহমান হৃদয়, বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের ফটো সাংবাদিক আসিফ মাহমুদ অভি, বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিক শেখ শরফুদ্দিন রেজা, বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক নীল আহমেদ তাকে সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং তাকে সহযোগিতা করে আসছেন।
ছোটবেলার স্বপ্ননের কথা বলেন, সব শিশু মত আমিও খেলা করতে পছন্দ করতাম। আমার ক্রিকেট খেলা বেশি পছন্দ। ছোট বেলার থেকে কবুতর, ঘুঘু পালন করতাম। আমি বিদেশি জাতের অনেক কবুতর ছিল।
আমি কখনো ভাবিনি সাংবাদিকতা করব। সাংবাদিকতা পেশায় ভালো কিছু করব এমন আত্মবিশ্বাস আছে। এখন আমার কোনো সংবাদ যখন পত্রিকায় ছাপানো ও ভিডিও নিউজ প্রকাশ হয় তখন খুব ভালো লাগে। তখন নিজেকে সাংবাদিক সাংবাদিক মনে হয়।
শাকিল বলে, সাংবাদিকতার আমার কাছে সব চেয়ে ভালো পেশা। এখন আমার পরিবার বলে ভালো করে লেখাপড়া কর তোমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াব। এখানে, সম্মান, সম্মানী, যশ-খ্যাতি সবই মেলে। নিজের প্রতিভা, যোগ্যতা, দক্ষতা প্রমাণ করার অনেক জায়গা রয়েছে এই পেশায়। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। আমি বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের হ্যালো ও প্রিজমে সাংবাদিকতা করছি কিছু দিন হল এর মধ্যে অনেক কিছু শিখেছি। এই সময়ে সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বিডিনিউজের হ্যালোতে কাজ করতে গিয়ে নানান দিক নির্দেশনা পেয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমের নাহার আপু ও প্লেটো দাদা, মহুয়া আপুর কাছ থেকে। সরেজমিনে গিয়ে কীভাবে নিউজ তৈরি করতে হয় এসব কলাকৌশল শিখিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, নিউজ করতে গিয়ে কোন সমস্যা হলে মহুয়া আপু, নাহার আপু, প্লেটো দাদা অনেক সাহায্য করে। প্লেটো দাদা ভিডিও নিউজে অনেক সাহায্য করে।
‘শিক্ষক হত্যা: কেন এ অবক্ষয়?’ ও ‘ভিক্ষে নির্ভর মুক্তিযোদ্ধার জীবন’ এরকম বেশ কয়েকটি সংবাদ বিডিনিউজের হ্যালো ও প্রিজমতে প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচিতি বেড়েছে তার। নিউজের ফলে সুবিধাবঞ্চিত এক শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। সোনাপুর বাঁশের সাঁকোর বেহাল অবস্থা এই সংবাদটি প্রকাশেরর পর একটি ছোট সেতুর ব্যবস্থা হয়। এসব ঘটনা তাকে কাজের ব্যাপারে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
সাংবাদিকতা জীবনের প্রাপ্তি বিষয়ে জানালেন, এছাড়া কিছুদিন হল ‘ভিক্ষে নির্ভর মুক্তিযোদ্ধার জীবন’ তার সংবাদ প্রিজম ডট বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকম প্রকাশ হলে বিভিন্ন মিডিয়া এই নিউজটা করে । এছাড়া আমার ভিডিও সংবাদটি দেখে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেই ফোনে এবং ফেসবুকে শেয়ার ও ফেসবুকে মেসেজে বলে, ভা’ইয়া আপনার ভিডিওটা খুব ভালো হয়েছে। আরো বেশি হয় যখন শুনি আমার নিউজের ফলে মুক্তিযোদ্ধা এক তালিকাই নাম চলে এসেছে। এমন ছোট ছোট কাজ বা মেসেজগুলো আমাকে এই পেশায় কাজ করতে আরো উৎসাহ জোগায়।
বিডিনিউজ টোয়েনন্টিফোর ডটকমে সাংবাদিকদের সাথে কাজ করতে কেমন লাগে? আমাদের সবাই অনেক ভালো মনে মানুষ। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে আমিওদের অনেক ভালোবাসি। আরিয়ান ভাইয়া, সাদিক ইভান ভাইয়া, নানজীবা আপু,পৃথা, সজিবুল হাসান ভাইয়া,ছোট ভাই সাকির, সুমন, আল্লাউদ্দিনসহ অনেকেই আমরা বিডিনিউজ২৪ডটকমে একসাথে কাজ করছি। এ পর্যন্ত কারো সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে? মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড.শ্রী বীরেন শিকদার (এমপি), ফটো সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু, তরূণ সংগীতশিল্পী শাকিল আবসার, নাট্যশিল্পী মোঃ মতিউর রহমান(মতি), নাট্যশিল্পী হায়দার কবীর মিথুন, ঢাকা ল্যাংগুয়েজ ক্লাব ও বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের অংশগ্রহনে নির্মিত জনপ্রিয় কূটনীতিমুলক টকশো “ডিপ্লোম্যাটিক জোন” and tha Diplomats on ETV এর পরিচালক ও উপস্থাপক মাসুদ খান। কেমন লাগে সাংবাদিকতা? জীবনে পথচলা বড়ই কঠিন। অনেক বাঁধা পেরিয়ে পথ চলছি নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।
তবে সাংবাদিকতার সুবাদে সরকারি-বেসরকারি অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথেই পরিচয় হয়েছে ও আন্তরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। শুরুতে ফোনে কথা বলতে ভয় পেতাম এখন আর কোনো সমস্যা হয় না। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও কোনো শিশুদের প্রোগ্রাম হলেই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সাংবাদিকতা নিয়ে ভবিষ্যত কি পরিকল্পনা? সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনা করার ইচ্ছে আছে। আর পড়াশুনা শেষ করে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে নিউজ সংগ্রহ করবো। আর সাংবাদিতার বাইয়ে গরীব শিশুদের নিয়ে কাজ করব আর আমি এখনো গরীব শিশুদের নিয়ে কাজ করি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।