মানসিকতা পরিবর্তনে জেল’র নাম সংশোধানাগার হচ্ছে
প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা:
বন্দিদের সংশোধন, সমাজে পূনর্বাসন” এই মন্ত্রকে সামনে রেখে এবারের কারা সপ্তাহ-২০১৭ উজ্জাপন করতে যাচ্ছে কারা কতৃপক্ষ। এ উপলক্ষে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেছেন, বন্দীদের মানুষিকতা পরিবর্তনের জন্য জেল’র নামের পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। তিনি আরো বলেন, যখনই কেউ সংশোধনাগারে আসবে তখন থেকেই তার মানুষিক ভাবেই একটা পরিবর্তন শুরু হয়ে যাবে। এক সময়ে কারাগার শুধুমাত্র সাজা কার্যকরের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হতো। তাই সমাজের ঘুনে ধরা মানুষদের সংশোধনের জন্য কারাগারের চেয়ে সংশোধনাগার নামকরনই বেশী কর্যকর।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বকশীবাজার কারা অধিদফতরে কারা সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সংশোধনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বর্তমানে বন্দিদের সাজা কার্যকরের পাশাপাশি তারা যেন কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সে উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে তাদেরকে সংশোধনের মাধ্যমে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এ লক্ষে কারা প্রশাসন বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক ।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতগুল পদক্ষেপ রয়েছে যে গুলো কাজে দেশে-বিদেশে ব্যপক গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে । যেমন, প্লাম্বার, টাইলস লেইন, মেসনরী, মোকাসিন তৈরী, হাউসহোল্ড ইলেকট্রিক ওয়ারিং, এসি/ফ্রিজ মেরামত, ভারমি কমপোষ্ট, মাশরুম চাষ, পুরুষ এবং মহিলা মেকওভার কোর্স ইত্যাদি। এছাড়া বন্দিদের মানসিক উন্নতির লক্ষ্যে তাদেরকে ধর্মীয় ও আত্মিক শিক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি মাদকাসক্ত বন্দিদের মোটিভেশনের লক্ষ্যেও কারাগারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানান।
এ ছাড়া কারাগারে সাধারন বন্দীদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃস্টি করা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাই রিক্স আসামীদের বিচার কার্যাদি সম্পাদন করা ও বন্দীদের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেয়ার বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, বন্দিদের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক প্রদানের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কারা অধিদফতর থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রস্তাবনা সরকারের নিকট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং খুব শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারে ফোন বুথ স্থাপনের বিষয়ে পাইলট প্রকল্প টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এটুআই এর সহযোগিতায় বন্দীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার বিষটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগামী বৈঠকে এর চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আমরা এই প্রকল্পটি চালু করব। জঙ্গি বা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এ সুযোগ পাবে না। করা প্রধান বলেন, ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে কারাগার থেকে বিচার কার্যক্রমের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খুব শীঘ্রই বিজ্ঞ আদালত ও কারাগারের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এটুআই এর সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরাণীগঞ্জ ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানরত জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্র্ধষ প্রকৃতির বন্দিদের বিচার কার্যক্রম এ প্রক্রিয়ায় চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে । তিনি জানান, দেশের ৬৮ কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারে আটক আছে ৭৬ হাজার ৭৬৮ জন । পুরুষ ৫৭ হাজার ৬০৫ জন ও ২৩ হাজার ৪০ জন মহিলা, আটক বন্দির মধ্যে, সাজা প্রাপ্ত ১৮ হাজার ১০৩ জন, বিচারাধীন ৫৮ হাজার ৫৮২ জন , আরপি ৮৩ , মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত ১ হাজার ৩৭০ জন । আটক বন্দিদের মধ্যে ৫৩৭ মানসিক রোগাক্রান্ত , মাদকাসক্ত ৭ হাজার ১৩৫ জন, মায়ের সাথে থাকা শিশু ২৭৮ সংখ্যা ২৭৮ জন । কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জঙ্গি বন্দিদের মোটিভিশনের জন্য বিশেষজ্ঞর সন্ধান করছে কারা অধিদফতর। ইতোমধ্যেই শীর্ষ কর্মকর্তারা এ ধরনের বিশেষজ্ঞর খুঁজতে কাজ করছে বলে তিনি জানান । তবে বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়েছে । তিনি জানান, কারাগারের বডি স্ক্যান ও লাগেজ স্ক্যান মেশিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে। বন্দিরা যেন লুকিয়ে মাদকদ্রব্য কারাগারে আনতে না পারে তা ঠেকাতে বডি স্ক্যান ও লাগেজ স্ক্যান মেশিন কেনার পরিকল্পনা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘বন্দীদের সংশোধন, সমাজে পূনর্বাসন’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে যাচ্ছে এবারের কারা সপ্তাহ-২০১৭। ২০১৪ সাল থেকে কারা সপ্তাহ পালন শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর কারা সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে। সমাজের ঘুনে ধরা মানুষদের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কারাগারে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। এছাড়া বন্দীদের মানসিক উন্নতির লক্ষ্যে তাদেরকে ধর্মীয় ও আত্মিক শিক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি মাদকাসক্ত বন্দীদের মোটিভেশনের লক্ষ্যেও কারাগারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কারাগারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ততটা ওয়াকিবহাল না থাকায় তাদের মধ্যে কারা প্রশাসন সম্পর্কে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। তাই কারা প্রশাসনের হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পর্কে দেশের জনগণ তথা সাধারণ মানুষকে ধারণা প্রদান, কারা কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি উৎসাহ উদ্দীপনা ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করাই মূলত কারা সপ্তাহ উদযাপনের উদ্দেশ্য।