মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন না হওয়ায় ক্ষোভ !
বিনোদন প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক মান্নার নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পালিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পীরা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল নায়ক মান্নার নবম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি পারিবারিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হলেও জাতীয় পর্যায়ে এদিন কোনো কর্মসূচি ছিল না। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি উত্তরাস্থ মান্নার নিজ বাসভবন কৃতাঞ্জলিতে মান্না ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্মরণসভায় চলচ্চিত্র শিল্পীরা তাদের ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। নায়ক মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী আগামিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি করেন শিল্পীরা।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি আহমেদ শরীফ বলেন, মান্নার মৃত্যুর কারণে দেশের চলচ্চিত্রে দুর্দশা চলছে। যে মান্না সারাজীবন চলচ্চিত্র ছাড়া কিছুই ভাবতেন না। যার ছবি দেখার জন্য দর্শক পাগল থাকতো, যার মৃত্যুর পর হাজার হাজার ভক্ত এফডিসিতে ভীড় করেছিলেন, সেই মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী আজ নীরবে পারিবারিক ভাবে পালন হচ্ছে। তার এই মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি করছি।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রিয় খলনায়ক মিশা সওদাগর বলেন, এদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়ক ছিলেন মান্না। তার মৃত্যুবার্ষিকী জাতীয়ভাবে পালন করা হবে না এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এদেশে চলচ্চিত্র শিল্পীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ নাট্যাঙ্গণের শিল্পীদের কদর করা হয়। তাদের জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয়ভাবে পালন করা হয়।
মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মান্না ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই দিন বাদ জুম্মা এফডিসিতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একই দিন বাদ আছর উত্তরায় মান্নার কৃতাঞ্জলী বাস ভবনে স্মরণসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয় এ স্মরণসভায় চলচ্চিত্র অঙ্গণের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা স্মৃতিচারণ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফ, চিত্র নায়িকা মৌসুমী, মিশা সওদাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানি, সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান, নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল, অভিনেতা সুব্রত, দীঘি, নায়ক ইমন, জায়েদ খান, নায়িকা সাথী, ইলিয়াস কোবরা, শিবা সানু, দীপুল, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, মান্নার একমাত্র ছেলে সিয়াম, চম্পা, সুলতানা হায়দার, পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদরুল আলম খোকন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নেতা খুরশীদ আলম খসরু, মান্না ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আহমেদ চন্দন, আক্তারুজ্জামান প্রমুখ। স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন মান্নার স্ত্রী মান্না ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেলী মান্না ও রফিকুল ইসলাম। এর আগে মান্নার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক মান্না মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মারা যান। এ খবর শুনেই চলচ্চিত্র জগতের সকলে বিস্মিত ও অবাক হন। কারণ এ দুঃসংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। এফডিসি জুড়ে শুধু নয় সারা দেশজুড়ে মান্নার মৃত্যু বয়ে আনে শোকের ছায়া। অনেক ব্যবসা সফল ছবির এ নায়ককে আজও একইভাবে মনে রেখেছেন ভক্তরা। মান্নার মৃত্যুর খবরে সবার চোখে মুখে অভিব্যক্তি একটাই, সব শেষ। আজও চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষেরা মান্নার অভাবটা প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেন। মান্নাবিহীন পুরো চলচ্চিত্রটাই কেমন যেন ছন্নছাড়া। চলচ্চিত্রের অনেকে এখনও আফসোস করে অকপটে স্বীকার করেন, মান্না থাকলে এমনটি হতো না। কারণ, মান্না শুধু একজন নায়ক কিংবা অভিনয় শিল্পীই ছিলেন না। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সিনেমাপ্রেমী মানুষ। দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য যা সবচেয়ে বড় পাওয়া। মান্না এ ভালোবাসা এত বেশি পেয়েছেন যা হিসাব করে বলা যাবে না। ১৯৮৪ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সিনেমার সুপারহিরো। মুস্তফা আনোয়ারের ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছিল মান্নার প্রথম সুপারহিট ছবি। এ ছবিতে মান্নার বিপরীতে ছিলেন চম্পা। মান্না একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা এবং একজন সফল প্রযোজক। তিনি সাড়ে তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে-সিপাহী, যন্ত্রণা, অমর, পাগলী, দাঙ্গা, ত্রাস, জনতার বাদশা, লাল বাদশা, আম্মাজান, আব্বাজানা, রুটি, দেশ দরদী, অন্ধ আইন, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, অবুঝ শিশু, মায়ের মর্যাদা, মা বাবার স্বপ্ন, হৃদয় থেকে পাওয়া ইত্যাদি।